ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বধ্যভূমি সংরক্ষণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করে গণপূর্ত অফিস। কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের মালামাল দেওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দুই বছর ধরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে বিভিন্ন অংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
যদিও স্মৃতিস্তম্ভটি হস্তান্তরের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে গণপূর্ত অফিস। কিন্তু অনিয়মের কারণে স্মৃতিস্তম্ভটি বুঝে নিতে রাজি হয়নি উপজেলা প্রশাসন। জানা যায়, ৬০ লাখ টাকা ব্যয় স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ পেয়েছে মেসার্স নাঈমা এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, কুমারগাতা ইউনিয়নের আয়মন নদীর তীরে ডৌয়াখোলার একটি ময়লার ভাগাড় ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। তবে অনিয়মের কারণে টাইলসসহ বিভিন্ন জায়গা ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে।
অনিয়মের বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আবুল কাসেম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই বলাবলি করছে নকশা অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভের যেখানে টাইলস দেয়ার কথা ছিল তা দেয়া হয়নি এবং কাজের মধ্যে ত্রুটি রয়েছে।
প্রকল্পটি তদারকির দায়িত্বে থাকা গণপূর্তের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন স্তম্ভটি বুঝে না নেওয়াতে অরক্ষিত থাকায় গেটগুলো ভেঙে গেছে। যা ঠিকঠাক করা হচ্ছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাঈমা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আব্দুল মোমেন খান বলেন, ‘আমি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ করে গণপূর্তকে বুঝিয়ে দেই। সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দিয়ে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। আমার কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান বলেন, যেসব অংশে ফাটল ও ধসে পড়েছে সেগুলো ঠিকাদারকে ঠিকঠাক করে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি।
কেনো স্মৃতিস্তম্ভটি বুঝে নেননি জানতে চাইলে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মনসুর বলেন, গণপূর্ত থেকে চিঠি পাওয়ার পর আমি স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে যাই।
কিন্তু তখনো স্মৃতিস্তম্ভের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে বিভিন্ন অংশে ফাটল ও টাইলস ধসে পড়েছে। গেট ভাঙা পড়ে আছে। এমন অবস্থায় স্মৃতিস্তম্ভটি বুঝে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
এছাড়া কোনো কর্মকর্তা সেটি বুঝিয়ে দিতে আমার কাছে আসেনি। তবুও আমি গণপূর্তকে বলেছি, নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী স্তম্ভটি আমাকে বুঝিয়ে দিন, আমি বুঝে নেব।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বড় বাইশা বিলের কাতলশা নামক স্থানে আয়মন নদীর তীরে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করে ভাগাড়ের স্তূপ করে ফেলে রেখে যায় পাকিস্তান বাহিনী। সেইসব শহিদের স্মরণে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি।