সমালোচনার সদুত্তর না থাকলে এবং কৃতকর্মের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে সমালোচনাকারীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা এবং চরিত্র হনন করা বহুল ব্যবহৃত অপকৌশল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ওই অপকৌশল ব্যবহার করেছেন। নিজের কৃতকর্ম আড়াল করতেই চরিত্র হনন করছেন তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত ছাড়াই অসত্য অভিযোগ প্রচার করেছেন।
শনিবার সুজনের এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে সিইসির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার ‘আরএফইডি টক উইথ সিইসি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে কেএম নূরুল হুদা সুজনের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সিইসির সঙ্গে বারবার দেখা করে কাজ না পেয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন জানায়, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হলফনামার তথ্য প্রকাশ ও প্রার্থী এবং ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ওই কাজের জন্য ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত ইসির এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে নয় লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দেওয়া হয়। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। ওইসব কাজের বিল-ভাউচার নির্বাচন কমিশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সিইসি যে বইটি সংবাদ সম্মেলনে দেখিয়েছিলেন সেটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বিল দিয়েছে ইউএনডিপি। তবে পিপিআর-পিপিএর কোন ধারা অনুসরণ করে ওইসব কাজ দেওয়া হয়েছিল তা জানাতে পারেনি সুজন।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। লিখিত বক্তব্য পড়েন সুজনের সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বক্তব্য রাখেন- সাবেক বিচারপ্রতি এমএ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ।
বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, যখন তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ জানতে পারলেন তখনই তা তদন্ত করা অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। যখন এসব অভিযোগ করলেন তখনই তিনি তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বাজারি একটা গল্প বলে দিলেন। তিনি শুনেই তা কোনো যাচাই ছাড়াই প্রচার করে দেওয়া মিথ্যাবাদিতার লক্ষণ। যে ব্যক্তি নির্বাচনে সহিংসতায় ১০০ জনের মৃত্যুর পর বলতে পারেন আমার কোনো দায়িত্ব নেই, সে এসব কথা বলতেই পারেন। একজন মানুষের সম্মানহানি করা তাকে হত্যার সমান অপরাধ।
টিআইবির গবেষণা ও বিবিসির খবরের বরাত দিয়ে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাতের ভোট নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। অনেক অনিয়ম হয়েছে। যেগুলোর বিচার হয়নি। বিচার করার অভিপ্রায়ও তাদের ছিল না। ফল প্রকাশের পরও তদন্ত করে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ইসির আছে। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, এরকম একজন খলনায়ককে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে আইনটা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এরকম লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সুজন সম্পাদক সিইসির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালতে গেলে রিমেডি পাওয়া যাবে কিনা- বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা বিবেচ্য বিষয়। তবুও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই মানহানি হয়েছে। শুধু আমার নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের মানহানি হয়েছে।