মাঠে তিনি ‘একের ভেতর দুই’। মানে, তিনি খেললে বাংলাদেশ তার মাঝে দুজন খেলোয়াড়কে পায়। এজন্যই সাকিব আল হাসানের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, ‘যখন প্রয়োজন, তখন পাই না সাকিবকে।’ এখন তো আরও বেশি প্রয়োজন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ যখন দলে নেই। কী আশ্চর্য, যখন সাকিবের খেলার সম্ভাবনা শূন্য, তখনই ভোজবাজির মতো তিনি কোভিডমুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ ফিট-টিট হয়ে চট্টগ্রামে উড়ে গেলেন। অনুশীলনে নামলেন। তাকে ছাড়পত্রও দেওয়া হলো, তিনি ফিট। খেলতে কোনো বাধা নেই। এ এক বিরাট খবর বাংলাদেশের জন্য।
শ্রীলংকার বিপক্ষে আজ শুরু চট্টগ্রাম টেস্টে মাঠে নামার আগেই সাকিবের মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠা তার মানসিক দৃঢ়তারই প্রমাণ। দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ বাংলাদেশ খেলতে নামছে নিকট অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন মুছে দেওয়ার পণ করে। এই ইচ্ছাপূরণে সাকিব হতে পারেন মুমিনুলদের অন্যতম চালিকাশক্তি।
এ বছর নিজেদের আঙিনায় লাল বলের ক্রিকেটে পথচলার শুরু এই টেস্ট দিয়ে। শুরুটা চট্টগ্রামে, এটাও একটা ভালো দিক। কেননা সাগরপারে তামিম ইকবালরা ভালোই রান পান। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে এবারও রানপ্রসবা টেস্ট দেখতে পাচ্ছেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। আশার সলতে বাড়িয়ে দিয়েছে পরিসংখ্যানও। টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র ৬০০ ছাড়ানো ইনিংস রয়েছে শ্রীলংকার বিপক্ষে। ২০১৩ সালে গল টেস্টের সেই সুখকর স্মৃতি মুশফিকুর রহিমরা চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনলে বর্তে যাবে বাংলাদেশ। ওই টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক।
শ্রীলংকার দিকটাও একটু দেখতে হয়। দ্বীপদেশ বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক সংকটে। বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ। এই পটভূমিতে ঢেলে সাজানো দলে ‘অনেক নতুনের’ সমাহার। আটটি পরিবর্তন এনে টেস্ট দলে একঝাঁক নতুন মুখের প্রবেশ ঘটানো হয়েছে। কোচও নতুন। ইংল্যান্ডের ক্রিস সিলভারউডের এটি প্রথম টেস্ট শ্রীলংকার কোচ হিসাবে। অতিথিদের পক্ষে পরিসংখ্যান ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত এই দুটি ম্যাচ জেতার মোক্ষম সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।
২০০১ সালে ক্রিকেটের আদি সংস্করণে প্রথম শ্রীলংকার মুখোমুখি হওয়ার পর বাংলাদেশ এই টেস্টের আগে ২২ ম্যাচে মাত্র একবারই জিতেছে। বিপরীতে ১৭টি হার। বাকি চারটি টেস্ট ড্র হয়। শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সফর যেন ‘ওয়ানওয়ে ট্রাফিক’। ২০১৭ সালের মার্চে কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে চার উইকেটের জয়, সুখস্মৃতি এই একটাই। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে অস্থির শ্রীলংকা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেন, ‘ওদের সিচুয়েশন ওরা হ্যান্ডেল করবে। ওরা কী চিন্তা করছে না করছে, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবার কোনো দরকার নেই। আমাদের কাজ হলো পাঁচ দিন ভালো ক্রিকেট খেলা। এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
শ্রীলংকার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে বলেন, ‘উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই থাকবে না। তবে আমি মনে করি, আপনি যদি মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে পারেন, তাহলে উইকেট পাবেন। দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি ফ্ল্যাট উইকেট।’
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে ২৩ মে।