আজকের পত্রিকা

সংশোধিত কপিরাইট আইন পাশ হবে কবে

সংশোধিত কপিরাইট আইন পাশ হবে কবে

প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উৎকর্ষতার কারণে উন্নত বিশ্বে প্রতিবছরই কপিরাইট আইনের পরিবর্তন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৭ সালে সংশোধিত আইনটি এখনও পাশ হয়নি। যদি এখন আইনটি পাশও হয় তার উপযোগিতা কতটুকু ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক যে কোনো সৃজনকর্মে সৃষ্টিকারকের অধিকারকে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই আইন।

সংশোধিত আইন প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আইনটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন হয়ে লেজিসলেটিভ, আইন শাখায় গেছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সেখান থেকে জাতীয় সংসদে যাবে।’ বর্তমানে ‘বাংলাদেশে কপিরাইট আইন-২০০০’ (২০০৫ সালে সংশোধিত) কার্যকর আছে। এ আইনে ডিজিটাল সময়ের মেধাস্বত্বের অনেক কিছুরই সমাধান হচ্ছে না। সে কারণে আইনটি সংশোধন করা হলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে সংশোধনটি।

এ বিষয়ে কপিরাইট সংশোধন আইন কারিগরি কমিটির সদস্য খান মাহবুব বলেন, কপিরাইট আইন এমন একটি বিষয় যা কয়েক বছর পরপরই পরিবর্তন করতে হয়। এশিয়ার জাপান বা তাইওয়ানের দিকে তাকালেই দেখা যায়, সেখানে দুই বছর পরপরই আইন সংশোধন করা হয়। কারণ, এখানে কিছুদিন পরপরই নতুন সৃষ্টি ও সমস্যা আসতে পারে। সেদিক থেকে আমাদের কপিরাইট আইন দীর্ঘদিন পর সংশোধন করা হলেও এটি আলোর মুখ দেখছে না। অন্যদিকে নতুন নতুন সমস্যা কিন্তু তৈরি হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। সেদিক থেকে সংশোধনটি আইন আকারে সহসাই না এলে এটি তার উপযোগিতা হারাতে পারে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন কপিরাইট অফিসের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি কমিটির মাধ্যমে প্রায় দুই বছর ধরে কপিরাইট আইনটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু ২০১৯ এ মন্ত্রণালয়ে সংশোধনীটি জমা দেওয়ার পর কিছুটা গতি হারায়। পরিমার্জন করা আইনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যেই ঘুরপাক খায় অনেক দিন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

সময়ের দাবি অনুসারে প্রস্তাবিত নতুন আইনে বেশ কিছু উপধারা যেমন-নৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, রিলেটেড রাইটস, পাবলিক ডোমেইন, সংকলক প্রভৃতি সংযোজন করা হয়েছে। শিল্পকর্মের সংজ্ঞাসহ বেশ কিছু উপধারা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। রেজিস্ট্রারের আদেশের রিভিউ করার বিধান রাখা হয়েছে। কপিরাইট টাস্কফোর্সকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কয়েকটি জটিল ধারা ভেঙে বিভিন্ন উপধারায় বিভক্ত করে সহজীকরণ করা হয়েছে (যেমন ধারা ৫২)। কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত মামলা দায়রা জজ ছাড়াও দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে বিশেষ আদালত বিচারার্থে গ্রহণ করতে পারবে। এ সংশ্লিষ্ট একটি বিধান রাখা হয়েছে। লোকজ্ঞান ও লোক-সংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষা পাবে প্রস্তবিত এই আইনে।

বিদ্যমান আইনের একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে সচেতনতার অভাব। এ লক্ষ্যে কপিরাইট বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে প্রদত্ত আইনে নানা পদক্ষেপ আছে। ডিজিটাল মিডিয়ার সুযোগে ইউটিউবসহ নানা গান, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জনের ক্ষেত্রে প্রণেতাকে উপেক্ষা করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে উল্লিখিত মাধ্যম থেকে অর্জিত আয়ে প্রণেতার অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কপিরাইটবিষয়ক রেগুলেটরি হিসাবে কপিরাইট অফিসকে পূর্বতন অবস্থা থেকে অধিকতর শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন প্রয়োগ ক্ষেত্র কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শাস্তি ও জরিমানা বৃদ্ধি, টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের খসড়ার ৮৩ ধারায় কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে শাস্তি তিন বছরের স্থলে পাঁচ বছর এবং অন্যূন ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার যুগান্তরকে বলেন, এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ, ইনোভেশন ও মেধার কথা বলছি কিন্তু সেটাকে বৈধ আইনি কাঠামো দিতে পারছি না। আমরা এখনও ‘মাদ্রিদ প্রটোকল’ এ স্বাক্ষর করতে পারিনি। গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, লেখক থেকে শুরু করে ডিজিটাল টেকনোলজি বা সফটওয়্যার নির্মাতাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা এই সময়ে দেওয়া যায়নি। কিন্তু তাদেরকে যদি সুরক্ষা দেওয়া না যায় তাহলে কোনো শিল্পই গড়ে উঠবে না। তাই অতিদ্রুত সংসদ, মন্ত্রিসভা হয়ে কপিরাইট আইনের সংশোধনটি আইন আকারে সামনে আসা দরকার।