সারাদেশ

শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে এবারের ঈদ আনন্দে কেটেছে তাদের

শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে এবারের ঈদ আনন্দে কেটেছে তাদের

বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি ঘর না থাকায় ২৬ বছর বাপের বাড়ি বসবাস করেছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাউসা গ্রামের রাহেলা বেগম (৪২)। তার বাবারও তেমন জমি ও অর্থ সম্পদ না থাকায় মাঝে মধ্যেই ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া লাগতো।

রাহেলার স্বামী কাশেম মিয়ারও বাবার বাড়ি ভূঞাপুর সদরে তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে ঝগড়া ও শতকষ্টের মাঝে বাপের বাড়িতেই বসবাস করতেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্মের পর বাবার বাড়িতে বসবাস আরও কষ্ট হয়। তবে সদর উপজেলার চিলাবাড়ী গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর পেয়ে শান্তিতে বসবাস করছে রাহেলা বেগম দম্পতি’।

রাহেলা বেগম বলেন, স্বামীর আয়ের রোজগারের টাকায় বাপের বাড়িতে খাইছি। তবে ভাই ও ভাই বউয়ের ঝগড়ার কারণে কখনো শান্তি পাইনি। এমনকি ঈদের দিনও ভাল যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ঘর পেয়ে শান্তিতে বসবাস করছি। ঈদও খুবই আনন্দে কাটিয়েছে। আপন ঠিকানায় ঈদ করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।

শুধু রাহেলা বেগম নয়, তার মতো টাঙ্গাইলের দুই হাজার ৫৪৯ জন ভূমি ও আশ্রয়হীন পরিবারের মানুষ আনন্দ উল্লাসে ঈদ কাটিয়েছে।

ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদেরকে খাদ্যসামগ্রী এবং শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মদিনে ও জাতীয় শিশু দিবসে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সকল শিশুদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রথম পর্যায়ে জেলার ১২ উপজেলায় ১ হাজার ১৭৪টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ১৩০টি এবং তৃতীয় দফায় ২৪৫টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। ঘর পেয়ে ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন শান্তিতে বসবাস করছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনির তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলো টেকসই ও সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সুবিধাভোগীরা।

এছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের কিশোর গ্যাং, মাদক ও অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করতে এবং শিশুদের মানসিকতা বিকশিত করতে ‘জয় বাংলা আশ্রয়ণ সাংস্কৃতিক সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনির পরিকল্পনায় জেলার ১২টি উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জয় বাংলা আশ্রয়ণ সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি তাদেরকে তবলা, হারমোনিয়ামসহ সাংস্কৃতিক যন্ত্রাংশ বিতরণ করেছেন।

সরেজমিন চিলাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, এই প্রকল্পের ভূমিহীন ৪৯টি পরিবারের সদস্যরা আনন্দ উল্লাসে ও শিশুরা হৈচৈ করে ঈদের সময় পার করছে। অনেকের ঘরে আত্মীয় স্বজনরা এসেছে ঈদের দাওয়াতে। তারাও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা ঠান্ডু সরকার বলেন, ২২ বছর আগে যমুনার ভাগনে সব হারিয়েছে। মাহমুদনগর ইউনিয়নের বাইলাপাড়া গ্রামে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে সে ঘর করে বসবাস করতাম। তবে সেই বাড়িটি আমার আপন ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর পেয়ে শান্তিতে আছি। শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ থাকলেও এই ঈদ খুব শান্তিতে পার করেছি।

অপর বাসিন্দা কমলা বেগম বলেন, স্বামীর বাড়ি ঘর ১৮ বছর আগে যমুনা খাইছে। এরপর দাইন্যা গ্রামে চলে এসে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। এখন খুব শান্তিতে বসবাস করছি। ঈদও আল্লাহর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘরে ভালই কাটছে। নানি পুতি নিয়ে শান্তিতেই আপন ঠিকানায় বসবাস করছি।

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন উৎসবে খাদ্যসামগ্রী, শীতবস্ত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পের নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ ও তাদের মাঝে মেশিন বিতরণও করা হয়েছে। অপর দিকে সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা করায় বাসিন্দাদের ছেলে মেয়েরা মাদক ও কিশোর গ্যাং থেকে দুরে রয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সকল বাসিন্দাদের মাঝে ঈদে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। নিজের ঘরে তারা প্রথম ঈদ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত। ঈদে আমিও বেশ কয়েকটি প্রকল্প ঘুরেছি। বাসিন্দারা খুবই আনন্দ উল্লাসে দিন পার করছে। ভূমিসহ ঘর পাওয়ায় আমার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাসিন্দারা।