বয়স বেশি নয়। অধিকাংশই কিশোর বয়সের শেষদিকে। কোনো কোনো অস্ত্রের ভার সইতেও কষ্ট হয় অনেকেরই। ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করতে কিয়েভ কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকদের দলে নাম লিখিয়েছেন তারা। কেউ কেউ খুব বেশিদিন স্কুলে যেতে পারেননি। তিন দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরই যুদ্ধক্ষেত্রে শামিল হবেন তারা। রুশদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে তর সইছে না তাদের। মুখিয়ে আছেন-কবে কিয়েভ আক্রমণ করবে রুশরা।
স্বল্পপ্রশিক্ষণে যুদ্ধে যাওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন কিয়েভের এই কিশোর-যুবারা। স্বেচ্ছাসেবক সৈনিক হতে চাওয়া এমনই একজন ম্যাকসিম লুটসিক (১৯)। জীববিজ্ঞানের ছাত্র। মাত্র এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই অল্প বয়সে যুদ্ধে যেতে ভয় করছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সৈনিক হব, যুদ্ধ করব। এ নিয়ে মোটেও বিচলিত নই।’ পাঁচ বছর স্কাউটে ছিলেন তিনি। এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন যুদ্ধাস্ত্র পরিচালনার। ২০১৪ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। লুটসিক বলেন, ‘তখন কেন এ সুযোগ ছিল না, ভেবে আফসোস হয়।’লুটসিকের বন্ধু ম্যাক্সিমের বন্ধু দিমিত্রো কিসিলেনকোর বয়স ১৮। অর্থনীতির ছাত্র তিনি। ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা তাদের দেখে উচ্চস্বরে হেসেছিলেন, যেন তা তাচ্ছিল্যের হাসি। দিমিত্রো বললেন, ‘আসলে তা নয়, এটা ছিল আমাদের সাহসকে প্রশংসা করার হাসি।’
স্কেটবোর্ড, স্লিপিং ব্যাগ, যোগব্যায়ামের মাদুর, হাঁটুর প্যাড ইত্যাদি নিয়ে তারা যোগ দিয়েছেন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে। ট্রেনিং ঘাঁটিতে যাওয়ার পর হাতে তুলে নিতে হয়েছে ভারী অ্যাসল্ট রাইফেল। প্রশিক্ষণে তাদের ইউনিফর্ম, বডি আর্মার, সঠিক পদাতিক নি-প্যাড এবং হেলমেটও দেওয়া হয়েছে। সে কী পরিশ্রম! স্বেচ্ছাসেবকরা বালির ব্যাগ এবং স্টিলের ট্যাঙ্ক ফাঁদ দিয়ে প্রতিরোধ ব্যূহ তৈরি করছিলেন। লুটসিক বললেন, ‘এ ধরনের সেরা প্রশিক্ষণেই আমরা প্রকৃত যোদ্ধা হয়ে উঠব।’
তিনি আরও বললেন, ‘আমি আমার বন্দুকের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি শিখেছি কীভাবে গুলি করতে হয় এবং যুদ্ধে কীভাবে সেরা পারফর্মেন্স দেখাতে হয়। আমি বিশ্বাসী, রুশদের সঙ্গে আমাদের লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।’ এরপর এই যুবক কেন হাসলেন, তার অর্থ উদ্ধার করা কঠিন ছিল। তবে প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধাকেই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে তাদের শরীরী ভাষায়। দিমিত্রো বললেন, ‘আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বোধ করছি। কারণ আমরা আগে থেকেই মার্শাল আর্ট জানি। এরপর এখানে শিখেছি যুদ্ধ কৌশল। আরও শিখছি আহতদের কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। এখন আমাদের সবার মনেই প্রশ্ন, কিয়েভ যুদ্ধ শিগগিরই শুরু হচ্ছে কি-না। আমরা সেখানে যেতে উদগ্রীব। রাশিয়ানদের ওখানেই থামাতে হবে।’