জানুয়ারির শুরু থেকে দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজশাহীসহ রেডজোনভুক্ত জেলাগুলোতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে করোনার সংক্রমণ রোধে বাস-ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। রাত আটটার পর বন্ধ রাখা হচ্ছে দোকানপাট, শপিংমলসহ হাটবাজার ও ব্যবসা কেন্দ্র। এদিকে করোনা মোকাবিলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে সপ্তাহ খানেক ধরে। এমন নানা বিধিনিষেধের মধ্যেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না রাজশাহীর করোনা সংক্রমণের হার। ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে জেলার করোনা পরিস্থিতি।
অন্যদিকে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে কোচিং সেন্টারগুলো চলছে ঠিকই। সশরীরেই সেখানে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে প্রতিদিন। ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুরো পরিবারে বাড়ছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি। বেশ কিছু কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউশনি সেন্টার প্রকাশ্যে চলছে। আবার অনেক ক্লাস কার্যক্রম চলছে কিছুটা কৌশলে, দরজা বন্ধ করে। অভিভাবকদের অভিযোগ-প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে কোচিং মালিকরা ব্যবসা চলিয়ে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়েই তারা কোচিং সেন্টারে ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও রাজশাহী জেলা প্রশাসন বলছে, নগরীতে কোচিং কার্যক্রম বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শনিবার ও রোববার সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর নিউরন মেডিকেল ও নার্সিং কোচিং, নেফরন নার্সিং কোচিং, রয়েল মেডিকেল কোচিং, আইরিশ নার্সিং কোচিং, নিকুঞ্জ কেমিস্ট্রি প্রাইভেট সেন্টার, মেডিভার কোচিং সেন্টার, উজ্জ্বল ম্যাথ কেয়ার, রনি স্যার ম্যাথ কেয়ার, আতিক স্যার কেমিস্ট্রি, এজি ফিজিক্স সেন্টার, ওয়াদুদ বায়োলজি, সোহান ইংলিশ, আইএসসি কেমিস্ট্রি, ফাহাদ বায়োলজি সেন্টার, বাসার ম্যাথ কেয়ার, বাংলা বিদ্যাপীঠ, অভিজিৎ ইংলিশ কেয়ার, জাহিদ ফিজিক্সসহ অর্ধশত কোচিং সেন্টারই খোলা। সেন্টারগুলোর বাহিরে জটলা করে আসা-যাওয়া করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এর বাইরেও আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ব্যাচ আকারে একসঙ্গে চলছে ২০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস-পরীক্ষা।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, কোচিং সেন্টারগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষার সময় সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ বা স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও। শিক্ষার্থী অভিভাবক কোচিংয়ের টিউটর-কারো মুখেই মাস্ক নেই। গাদাগাদি করেই চলছে কোচিং ব্যবসা। স্বাভাবিক ভর্তি, চলমান ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম দেখে বোঝার উপায় নেই রাজশাহী করোনার রেড জোনে অবস্থান করছে। চারদিকে চলছে মহামারির ভয়াবহ আতঙ্ক। কয়েকজন অভিভাবক-শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোচিংই এখন তাদের ভরসা। তবে সবার উচিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। কিন্তু কোচিং সেন্টারগুলোতে তা মানা হচ্ছে না। মইনুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। জনসমাগম এড়াতে যেখানে সরকার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, সেখানে এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে নগরীতে রমরমা চলছে কোচিং সেন্টার। যেহেতু নগরীতে কোচিং সেন্টার বন্ধ নেই। তাই তারাও ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাচ্ছেন অন্যদের দেখাদেখি। তবে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না-বড় আশঙ্কার কথা সেটাই।
সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে নিউরন কোচিং সেন্টারের একজন পরিচালক বলেন, বিধিনিষেধ থাকলেও আমরা আমাদের মতো করে চালাচ্ছি। সবকিছু বন্ধ হলেও সব কোচিং সেন্টার চালু আছে। নিয়মিত ক্লাস, ভর্তি, পরীক্ষা সবই চলছে। কেউ তো বন্ধ রাখেনি। প্রশাসন বললে তারাও বন্ধ করে দেবেন।
নেফরন কোচিং সেন্টারের সমন্বয়ক আহমদ উল্লাহ সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে আমি রাজশাহীতে নেই। শনিবার থেকে নগরীতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে শুনেছি। সবাই বন্ধ করলে আমরাও বন্ধ করে দেব।
এদিকে সারা দিন সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার মেডিভার মেডিকেল ও ভার্সিটি কোচিংয়ের ব্যবস্থাপক তুষার খান বলেন, আমরা সশরীরে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি না। আমাদের পুরোটাই অনলাইনে চলছে।
বিধিনিষেধের ভেতরেই নগরীতে প্রকাশ্যে কোচিং সেন্টার চলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক বলেন, কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টার যেখানেই হোক সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চলার কথা নয়। নগরীতে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। তথ্য পেলে কোচিং সেন্টারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তবে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আমরা খবর পেয়েছি নগরীতে কিছু কোচিং সেন্টার গোপনে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।