দেশের সর্বাধিক রসুন উৎপাদনকারী উপজেলা হিসাবে পরিচিত নাটোরের বড়াইগ্রামে মসলাজাতীয় ফসল রসুন তোলা শুরু হয়েছে। বর্তমানে চাষিরা জমি থেকে রসুন তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু ন্যায্য দাম না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পেলেও দাম না থাকায় লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না তাদের। উল্টো বিঘাপ্রতি চাষিদের ৫-৬ হাজার টাকা লোকসান যাচ্ছে, আর যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন তাদের লোকসান প্রতি বিঘায় ২০ হাজারেরও বেশি। বিদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ রসুন আমদানি করার কারণেই চাষিরা রসুনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বড়াইগ্রামে ৯ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। এসব জমিতে কমপক্ষে ৮০ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয়েছে। বড়াইগ্রামের লক্ষীকোল বাজারে বৃহস্পতিবার রসুন বেচতে আসা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি মন রসুন মানভেদে মাত্র ৮০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। রসুনের এ অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। রসুন বিক্রি করতে আসা কৃষক মানিক হোসেন ও আব্দুল মালেক বলেন, অন্যান্য বছর এ সময়ে যে দাম থাকে, এবার দাম তার চেয়ে কম। এ অবস্থায় আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
মামুদপুর গ্রামের রসুন চাষি আবু রায়হান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষ, নিড়ানি, রসুন তোলা ও কেটে বাছাই করতে প্রায় ৪০ জন শ্রমিকের মজুরি ও খাবার খরচ বাবদ কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বীজ, সার ও সেচে আরও ১১-১২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন, তাদের বিঘাপ্রতি আরও ১৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মন রসুন উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমান দরে প্রতি বিঘায় উৎপাদিত রসুন সর্বাধিক ২০-২২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না, উলটো কৃষকের বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৫-৬ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।