চট্টগ্রামের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে গমের সংকট কেটেছে। ফলে গমের বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
বুধবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মন গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৩০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। তিন দিন আগেও ছিল দেড় হাজার টাকার বেশি।
ভারত থেকে গম আসা শুরু হওয়ার পর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেলের বাজারও স্থিতিশীল।
পাইকারিতে নতুন করে দাম না বাড়লেও খুচরায় নির্ধারিত দরের খানিকটা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে সরকারি সাইলোতে ১৮ হাজার টন গম মজুত আছে বলে জানা গেছে। ভারত থেকে আমদানির জন্য ৬ লাখ টন গমের যে এলসি খোলা হয়েছে, তা দ্রুত আমদানির তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি ঝুঁকিতে পড়ায় বিকল্প বাজার খোঁজার ওপরও গুরুত্বারোপ করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা গমের দাম বাড়তে শুরু করে। সোমবার ভালো মানের প্রতি মন (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) কানাডার গম বিক্রি হয়েছে ২১০০ টাকায়। কিছুটা নিুমানের ভারতীয় গম ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কয়েকদিনে এই গমই মনপ্রতি প্রায় ২০০ টাকা বেড়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় গম রপ্তানিতে বাধা নেই-ভারতের এমন ঘোষণার পর দাম আবার পড়তে শুরু করে। বুধবার থেকে ভারতীয় গম বিক্রি হয় প্রতি মন ১ হাজার ৪৩০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। এর আগে এসব গমের দাম ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে সাধারণত কম মূল্যের গম আমদানি হয়, যার চাহিদাই বেশি বাংলাদেশে। তাই ভারত থেকে রপ্তানি লম্বা সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকলে দেশে সংকট তৈরি হয়।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে ৬ লাখ টন গম আমদানির এলসি খোলা আছে। বিকল্প বাজার হিসাবে আর্জেন্টিনা থেকেও গম আনা যায় কি না, এ বিষয়ে আমদানিকারকরা খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সাইলোতে ১৮ হাজার টন গম মজুত ছাড়াও হালিশহর সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-সিএসডিতে ১ হাজার ৪৭২ টন এবং দেওয়ানহাট হালিশহর সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-সিএসডিতে এক হাজার মনের কিছু বেশি গম মজুত রয়েছে। চট্টগ্রাম সাইলো অধীক্ষক মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ শিবলী যুগান্তরকে জানান, গমের সংকট নেই। গমের মজুত স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের বাজার বাড়তি। এ সময় বাজার কমার কথা, অথচ চাল উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। চাল আড়তদারদের অভিযোগ, কিছু কিছু মিলার চাল মুজত করছে। চালের সরবরাহ থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণহীন বলে দাবি চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। এর প্রভাবে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের তথ্যমতে, কয়েক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চিনিগুঁড়া চালের দাম বস্তায় ৪৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য চাল গড়ে প্রতি মনে ৩শ টাকা করে বেড়েছে। দুদিন আগে ২ হাজার ৭শ টাকায় বিক্রি হওয়া জিরাশাইল চাল ৩ হাজার, ১ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাইজাম স্বর্ণা ২ হাজার ২৫০ টাকায়, ১ হাজার ৭শ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চাল ১ হাজার ৯শ, ১ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পারিজা ২ হাজার ২৫০ টাকায়, ২ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা মো. মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ভোজ্যতেল ও গমের পর এখন চাল নিয়ে আতঙ্কে আছেন তারা। চালের বাজার কখন কী অবস্থা হয় বলা যাচ্ছে না। দুদিন আগে নতুন করে চাল বস্তায় ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা বেড়েছে। চালের বাজার মিল মালিক ও বড় বড় শিল্পগ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে। সয়াবিন, চিনির মতো এখন চালও মজুত হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনের টানা নজরদারির কারণে ভোজ্যতেলের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত তেল ২০০ থেকে ২১০, খোলা তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসের শুরুতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ ও খোলা তেল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
১৭ মার্চ খুচরা বাজারে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০, পাম তেল ১৩৬ ও পাঁচ লিটার বোতলজাত তেল ৭৬০ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। সবশেষ গত ৫ মে আরেক দফা তেলের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলের দাম ৯৮৫ টাকা ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও থেমে নেই আমদানি। তারপরও মফস্বল এলাকায় ভোজ্যতেলের বাজার লাগামহীন। নজরদারির অভাবে উপজেলাগুলোয় বোতলজাত ভোজ্যতেল ২১৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।