বাংলাদেশ

বন্যহাতির তাণ্ডব: ধোবাউড়ায় নিদ্রাহীন রাত

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় বন্যহাতির আক্রমণে গত কয়েকদিনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত চার দিন ধরে সীমান্তবর্তী এই উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গোবরছনা ও দীঘলবাগসহ আরও চার ইউনিয়নে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চলে হাতির তাণ্ডব। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পালের হামলার আশঙ্কায় সময় কাটে তাদের।

<div class="paragraphs"><p>১৫ থেকে ২০টি হাতির ওই পালের তাণ্ডব শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে, চলে ভোররাত পর্যন্ত।</p></div>

১৫ থেকে ২০টি হাতির ওই পালের তাণ্ডব শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে, চলে ভোররাত পর্যন্ত।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে বন্য হাতির তাণ্ডবে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও হাতির পাল মানুষের ঘরে থাকা ধানচালও নষ্ট করছে; আসবাবপত্র ও গাছপালা ভাঙচুর করছে। আমরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।“

ধোবাউড়া উপজেলার গারো অধ্যুষিত এলাকাগুলো হাতির পালের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছেন। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে শীত।

মাইজপাড়া ইউনিয়নের বিপুল হাজং বলেন, “হাতির একটি দল পাহাড় থেকে সমতলে নেমে এসেছে। ১৫ থেকে ২০টি হাতির ওই পালের তাণ্ডব শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে, চলে ভোররাত পর্যন্ত। আমরা টর্চ লাইট, আগুন জ্বালিয়ে এবং পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।

“যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে প্রশাসন সহযোগিতা না করলে ঘরে ওঠা সম্ভব হবে না। আমরা সীমান্তবর্তী লোকজন এমনিতেই আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে থাকি।”

<div class="paragraphs"><p>বন্যহাতির তাণ্ডবে গাছপালা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে</p></div>

বন্যহাতির তাণ্ডবে গাছপালা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে

এ বিষয়ে বনবিভাগের সহযোগিতা চেয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আজহার উদ্দিন বলেন, “তারা সঠিক পদক্ষেপ নিলে হাতির তাণ্ডব কমবে। আমাদের ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষতি হলেও ভয়ে আমরা হাতিকে আঘাত করতে পারি না, সব দিক থেকেই সমস্যায় আছি আমরা।“

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ‘সহযোগিতার’ আশ্বাস পাওয়া গেছে জানিয়ে দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির সরকার বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে খাবারের অভাবে হাতির পাল মেঘালয় থেকে নেমে এসেছে। আর আমাদের এলাকায় ঘরবাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।“

ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যা সমাধানের জন্য জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার ও এলাকার বন কর্মকর্তাকে নিয়ে কমিটি করার কথা জানিয়েছেন ধোবাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন।

তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন পেলে যাচাইবাছাই করে সহযোগিতা দেওয়া হবে।“

<div class="paragraphs"><p>হাতির আক্রমণের আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন</p></div>

হাতির আক্রমণের আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন

সম্প্রতি হাতির উপদ্রব বেড়ে গেছে জানিয়ে ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা একে এম রুহুল আমিন বলেন, হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে ৩ লাখ টাকা, আহত হলে ১ লাখ এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। গত বছরও হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৩১ জনকে ২৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

তিনি জানান, দুই মাস আগে ক্ষতিপূরণের জন্য ২৪ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এবারও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে খোঁজখবর চলছে।

“সোলার ফেন্সিং করা হচ্ছে হাতির উপদ্রব ঠেকাতে। হাতি এলেও যাতে ফেন্সিংয়ে আঘাত পেয়ে ফিরে যায়।“