আজকের পত্রিকা

ভারত

ফেব্রুয়ারিতে জেসিসি বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘যৌথ কনসালটেটিভ কমিশন’ (জেসিসি) বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বৈঠক হওয়ার কথা। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে জেসিসি বৈঠকে সাধারণত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়। জেসিসির সপ্তম বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে দুই দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক করা যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রী ভালো আছেন। তার তেমন কোনো উপসর্গ নেই। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজেও কোভিড পজিটিভ বলে তিনি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া ছাড়া বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দিল্লিতে বৈঠকটি ভার্চুয়ালি করা যায় কিনা এমন আলোচনা থাকলেও ঢাকার কর্মকর্তারা ভার্চুয়াল বৈঠকে আগ্রহী নন। পরিস্থিতি উন্নতি হলে বৈঠকের সময় ঠিক করা হবে। বৈঠক করা সম্ভব হলে কোভিড ও কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস যুগান্তরকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে জেসিসি বৈঠক করার লক্ষ্যে ডিসেম্বর থেকে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখন ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির ওপর। উন্নতি হলে জোরালোভাবে প্রস্তুতি শুরু করব।’

ভার্চুয়াল বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মহামারির কারণে ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হয়েছিল। ওই সময়ে ভালোভাবে আলোচনা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ভার্চুয়াল বৈঠক না করে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বৈঠক করা জরুরি।’ বৈঠকে কী কী বিষয়ের প্রতি জোর দিচ্ছেন জানতে চাইলে মাশফি বলেন, ‘গত মার্চে মোদিজি এসেছিলেন। ওই সময় অনেক বিষয় আলোচনা হয়। ওই সময় আলোচ্য বিষয়ের কোনটার অগ্রগতি কী সে বিষয় পর্যালোচনা করব। কোনোটার কম অগ্রগতি হলে কেন হয়নি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অগ্রগতির প্রতি জোর দেব। এ ছাড়াও, নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্র আলোচনার টেবিলে আসবে। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করব।’

তিস্তাসহ অনিষ্পন্ন ইস্যুতে অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় হয়নি।’ প্রস্তাবিত ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ (সিপা) নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ে লাভ লোকসানের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। সম্ভাব্যতা যাচাই হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিল্লিতে জেসিসি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জানুয়ারিতে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ আমন্ত্রণ জানান। তবে তারিখ ঠিক হয়নি। সব ইস্যুতেই আলোচনা হবে।’

দিল্লিতে ভারতীয় সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেছেন, ‘আসন্ন জেসিসি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যেতে পারে। কারণ, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও গভীর হবে। নতুন সিপা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তি, বেসামরিক পরমাণু শক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে আলোচনা উল্লেখযোগ্য। সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে ভারত।’