সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে ইলন মাস্কের সরে দাঁড়ানোর পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গতকাল সোমবার মাস্ক নিজেই এমন একটি জরিপের উদ্যোগ নেন। ভোটাভুটির পর প্রশ্ন হলো, ইলন মাস্ক এখন কী করবেন? তিনি কি টুইটারপ্রধানের পদ থেকে সরে যাবেন, নাকি যাবেন না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে সিএনএন।
টুইটারপ্রধান থাকাকালে বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নেওয়ায় সমালোচিত হন মাস্ক। তাঁর সমালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেন মাস্ক। যদিও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনার মুখে তিনি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। টুইটারের অর্ধেক কর্মীকে ছাঁটাইও করেন মাস্ক।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার এক টুইট পোস্টে মাস্ক জানতে চান, সিইওর পদ থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত কি না। ওই সময় তিনি মতামত জরিপে যে ফলাফল আসবে, তা মেনে নেবেন বলেও জানান। ফলাফল চলেও এসেছে। বেশির ভাগ ভোটদাতা চান না, মাস্ক টুইটারের সিইও হিসেবে থাকুন।
ইলন মাস্কের টুইটার হ্যান্ডেলে অনুসারী রয়েছেন ১২ কোটি ২০ লাখ। গতকাল সন্ধ্যায় দেখা যায়, ১ কোটি ৭৫ লাখ ভোট পড়েছে ওই জরিপে। এতে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ টুইটার ব্যবহারকারী রায় দিয়েছেন, সিইওর পদ থেকে ইলন মাস্কের সরে দাঁড়ানো উচিত। আর ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবহারকারী চান, তিনি এই পদেই থাকুন। এরপরই মাস্ক একদম চুপচাপ। ১৮ ঘণ্টা ধরে টুইটে নতুন কোনো মন্তব্যও করেননি তিনি।
যদিও টুইটারে একেবারে নীরব ছিলেন না মাস্ক। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে টুইটার ব্যবহারের পরিসংখ্যান টুইট করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান টেসলা ও স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে কিছু টুইট করেছেন। তবে প্রতিশ্রুতি অনুসারে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
জরিপ দেওয়ার আগের দিন রোববার মাস্ক নিজেই স্বীকার করেন, টুইটার পরিচালনার জন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তি নেই। রোববার রাতে এক টুইটে মাস্ক বলেন, টুইটার সচল রাখার মতো কোনো উত্তরসূরি নেই।
টেসলার কয়েকজন বিনিয়োগকারী এর মধ্যে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরা বলছেন, টুইটারের লাগাম টানতে পারেন এমন ব্যক্তি আছেন। গত মাসে মাস্ক বলেন, তিনি টুইটার পরিচালনার জন্য অন্য কাউকে খুঁজে পাবেন। টুইটারে কম সময় দেবেন, এমন ভাবনার কথাও জানান মাস্ক। সে সময় এ রকম বেশ কয়েকজনের নামও প্রকাশ করা হতে থাকে। সিএনবিসি গত সপ্তাহে বলেছে, মাস্ক টুইটারের প্রধান হওয়ার পর থেকে টেসলার শেয়ার ২৮ শতাংশ কমেছে।
সোমবার টুইটারে মাস্কের জরিপ দেওয়ার পর বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার সামনে আরও দুঃসংবাদ রয়েছে। মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ওপেনহেইমার অ্যান্ড কোর কাছে টেসলার রেটিং কমেছে। বিশ্লেষক কলিন রাশ বলেন, ‘টুইটারের অব্যবস্থাপনার কারণে মাস্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন বলে আমরা মনে করি। টুইটারে বিজ্ঞাপনদাতা ও ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহণ কমছে। এ থেকে নেতিবাচক কিছু ঘটতে পারে বলে আমরা মনে করছি।’
রাশ আরও বলেন, গত কয়েক মাসে টুইটারের প্রধান হিসেবে মাস্কের আচরণ টেসলার ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট গ্রাহকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
রাশ আরও বলেন, সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করে মাস্ক মুক্ত বাক্স্বাধীনতার চর্চায় বিশ্বাসীদের বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করেছেন। যাঁরা মুক্ত বাক্স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, তাঁদের অনেকেই মাস্ক ও টেসলার প্রতি সমর্থন কমিয়ে দিতে পারেন।
মাস্ক নিজেই এখন টুইটারপ্রধান হিসেবে বিব্রত। ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে কেনা টুইটারের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য মাস্ক নিজেই এখন পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিশ্রুতি অনুসারে জরিপের ফলাফল মেনে টুইটারপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ালে মাস্ক আবার টেসলার কর্মীদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন।