আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগ

নানা কৌশলে বাগানো হচ্ছে দলীয় পদ ও মনোনয়ন

কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং তাদের মদদদাতাদের পুনর্বাসন চলছেই। নানা কৌশলে তারা বাগিয়ে নিচ্ছেন দল ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও আগের বিদ্রোহী প্রার্থী বা তাদের সহযোগীদের অনেকেই মাঠে রয়েছেন।

জেলা-উপজেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো রেজ্যুলেশনের সুপারিশে আসছে নামও। আর্থিক সুবিধা নিয়ে কিংবা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এ কাজ করে চলেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ড আগের মতোই কঠোর। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন এবং যারা তাদের মদদ দিয়েছিলেন তাদের শীর্ষ পদে আসার ও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তারা দলীয় মনোনয়নও পাবেন না। এ বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী যারা কোনো দায়িত্বে আছেন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। নতুন কোনো দায়িত্বও দেওয়া হবে না। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের আমরা দল থেকে একেবারে বাদ দিইনি। তারা দল করতে পারবেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে পূর্বের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক ছিল দলটি। তবে সেসময় বিভিন্ন স্থানে নানা কৌশলে বিদ্রোহীদের নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কেন্দ্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছিলেন কেউ কেউ। এ নিয়ে সারা দেশ থেকে জমা পড়া অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে সত্যতা মিললে মনোনয়ন পরিবর্তনও করা হয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও কোনো বিদ্রোহীকে দলীয় শীর্ষ পদ-পদবিতে না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু বিদ্রোহীই নয়, এদের মদদদাতাদেরও শাস্তির আওতায় পড়তে হবে। তাদেরও পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে সম্মেলন করতে হবে। তবু বিভিন্ন জায়গায় নৌকা বিরোধীদের পুনর্বাসনের কাজ চলছেই।

গত নির্বাচনে ত্রিশাল পৌরসভায় নৌকার পরাজয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন তৎকালীন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহিম খলিল নয়ন। এমনটা দাবি করে নৌকার প্রার্থী নবী নেওয়াজ সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বছর না ঘুরতেই ৭ মে সেই নয়নকে সভাপতি করে দুই সদস্যবিশিষ্ট ত্রিশাল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নবী নেওয়াজ সরকার।

নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নের জন্য গত ইউপি নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নান্না মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি কবির হোসেনের নাম পাঠানো হয়েছে। তবে কবির হোসেন পরে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করেন।

এছাড়া উপজেলার দেউলবাড়ি দোবরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান মিন্টু এবং গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাস্টার অলিউর রহমান ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানার নাম পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে মিন্টুর বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী তার বড় ভাই এফএম রফিকুল আলম বাবুলের পক্ষে প্রচারণা করার অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খান জানান, কলারদোয়ানিয়ার দুজন ও দেউলবাড়ি থেকে তিনজনের নাম দিয়ে একটি তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। জেলা তা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।