আজকের পত্রিকা

নুরুল ইসলাম

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছি: নুরুল ইসলাম

দেশকে ভালোবেসে জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ৯ মাস যুদ্ধের পর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি এলেও অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। তাই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেছিলাম। ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপের যাত্রা শুরু করি। নিজের শ্রম, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলি ৪১টি প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য ছিল একটাই-দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

মানুষের হাজারো স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশকে একটি ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে তোলা। সেই সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমানের উন্নতি সাধন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজের মধ্য দিয়ে ব্যয় করেছি। জীবনে সবকিছুই দেশের জন্য করেছি। একজন স্বপ্নসারথি হিসেবে আমি তিল তিল করে একটার পর একটা ইট বসিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছি। চেষ্টা করেছি স্বল্প ও সুলভ মূল্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে শহরের আবাসন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে। স্বাধীনতার পরপরই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল খুবই কম। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা এত সহজ ছিল না। আমাদের পুঁজিও ছিল খুব কম। কিন্তু স্বপ্ন ছিল বড়। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় ছিলাম। তীব্র মনোবল, অদম্য স্পৃহা, সততা এবং সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়েছি। ব্যবসায় ঝড় এসেছে, কিন্তু ভেঙে পড়িনি। মহান আল্লাহর রহমত এবং মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে ছিল। শুরুটা কষ্টের হলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এরপর দ্রুতই আমরা গণমাধ্যম, টেক্সটাইল, রেডিমেড গার্মেন্ট, বেভারেজ ও পানীয়, ভারী প্রকৌশল, ওয়েল্ডিং ও ইলেকট্রিক প্রভৃতি খাতে নেতৃত্ব পর্যায়ে চলে আসি। শহুরে মানুষের কথা মাথায় রেখে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিংমলও প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের এই উদ্যোগ অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। আমার মৃত্যু হতে পারে; কিন্তু আমার স্বপ্ন এমন একটি শক্তিশালী উদ্যোগে রূপ নিয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতেও চলমান থাকবে। [বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তৃতা থেকে সংকলিত]

নুরুল ইসলাম

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, যমুনা গ্রুপ

জন্ম ৩ মে ১৯৪৬ – মৃত্যু ১৩ জুলাই ২০২০