আজকের পত্রিকা

রেল

দুর্নীতির মামলা হলেও থেমে নেই পদোন্নতি

আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করলেও তার পদোন্নতি থেমে থাকেনি। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি পদোন্নতি দিয়ে তাকে সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইজিআর) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, প্রকৌশলী রমজান আলী ও তার স্ত্রী দিলরুবা পারভিন ইলোরার বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে।

২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলের সদর দপ্তরে (রাজশাহী) প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে রমজান আলী কর্মরত ছিলেন। এ সময় রাজশাহী রেলভবনে তার দুর্নীতি ছিল ব্যাপক আলোচিত। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবং পরে লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়। তবে রমজানের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করায় প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর তাকে রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় গ্রেডের পদমর্যাদার রেল পরিদর্শক (জিআইজিআর) পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। জানা গেছে, রেলওয়েতে পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রেলের নতুন লাইন স্থাপন কিংবা নতুন কোচ ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেল পরিদর্শকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে রমজানকে পদোন্নতি দেওয়ায় রেলের কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এতে দুদকের কর্মকর্তারাও বিস্মিত হয়েছেন।

জানা গেছে, প্রকৌশলী রমজান ও স্ত্রী ইলোরার নামে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার অভিযোগপত্র ২৪ জানুয়ারি দুদক অনুমোদন করেছে। কিছু প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে শিগগির অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক জানান, ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট তিনি রমজান দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে চার কোটি ২৯ লাখ ৯৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রমজানের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভিটাপাড়া গ্রামে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রমজানের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার স্ত্রী ইলোরার বিরুদ্ধে এক কোটি ৮৫ লাখ আট হাজার ৬৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইলোরার নামে তিন কাঠা জমি কেনা হয়েছে। এর বর্তমান বাজারমূল্য ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টাকা। একই জায়গায় আরও তিন কাঠা জমি রমজান ও ইলোরার যৌথ নামে কেনা হয়েছে। এর বর্তমান বাজার মূল্য ২৬ লাখ টাকার বেশি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এইচ ব্লকে তিন কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন রমজান। বাড়িটির বর্তমান মূল্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জামালপুরের সিংজানি মৌজায় ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৭ টাকা মূল্যের ৪ শতাংশ জমি আছে। একই মৌজায় আরও ৬ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন রমজান। পাবনার সরিষাফরিদ মৌজায় ২১ শতাংশ জমি রয়েছে ইলোরার নামে। তাদের নামে-বেনামে কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ জমা রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ১২ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার রয়েছে।

এদিকে, ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম কেএম ইমরুল কায়েশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার রমজানের আটতলা বাড়িটি ক্রোক করার আদেশ দেন। তবে দুদক আদালতের আদেশটি এখনো পরিপালন করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, রমজান ও তার স্ত্রী প্রায় চার কোটি টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ চার্জশিট অনুমোদন করেছে। এখন বাকি কাজগুলো করা হবে।