ফারজানা ইসলাম

জাবির সাবেক ভিসির অডিট আপত্তি ৬৫ কোটি টাকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গত চার অর্থবছরের অডিট আপত্তি দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ১৪ খাতের হিসাব নিরীক্ষার পর অডিটের মেমো সামারিতে লিখিত এ আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা দলের প্রধান মো. বাবুল হোসেন। এই খাত ছাড়াও আরও দুটি খাতের হিসাব ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি বলেও অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অন্তত চল্লিশটি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট অডিট কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যয় না করে ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের হঠকারী সিদ্ধান্তে ব্যয় বাড়ানোতে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামীদিনে এর সমাধান না হলে ব্যয় সংকোচনে হিমশিম খেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর তথা সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছরের অডিটের প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন করা হয় ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম দফা অডিটে বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। পরে আবার অর্ধশত খাতের তথ্য চেয়ে একাধিকবার তথ্য চাওয়া হয়। পরে ২০ মার্চ থেকে ২৪ মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় অডিট কার্যক্রম করা হয়।

প্রথম দফায় সম্পন্ন আংশিক অডিট আপত্তি যুগান্তরের হাতে এসেছে। সেখানে ১৪টি খাতের অডিট আপত্তি দেখা গেছে, ৬৫ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৩ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপত্তি দাঁড়িয়েছে শিক্ষকদের কয়েকটি খাতে অর্থ পাওয়ার কথা না থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সুবিধা দেওয়া। এসব খাতে সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ না দিলেও শিক্ষকদের এসব সুবিধা দিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা, বই ভাতা, সরকারি বাসায় বসবাসকারীদের কম হারে বাড়ি ভাড়া কর্তন ও শিক্ষকদের গবেষণার বিপরীতে সম্মানী থেকে শর্ত মোতাবেক কমপ্লায়েন্স না দেওয়ায় এই চার খাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ২১১ টাকা। পরীক্ষার সম্মানী বিল থেকে আয়কর কর্তন না করায় রাজস্ব ক্ষতি হয় এক কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪৩ টাকা। ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করেও সম্মানী নেওয়ায় চার লাখ ৩৮ হাজার ৬০৭ টাকা ক্ষতি হয়। ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফরমের ৪০% এর কম টাকা তহবিলে জমা করায় সাত কোটি ৯৭ লাখ ৩৩ হাজার ২৮০ টাকা ক্ষতি হয়। অনুমোদিত টিওএন্ডই প্রাধিকার ছাড়াই নতুন বাস কেনায় অনিয়মিত ব্যয় ৬০ লাখ ১৪ হাজার ২৫ টাকা। আইটেমের ম্যাটেরিয়াল টেস্ট রেইট সিডিউল সংখ্যা অপেক্ষা কম করায় টেস্ট ফি বাবদ সরকারের অর্থিক ক্ষতি চার লাখ ৬৮ হাজার টাকা। পিআর ২০০৮ অনুযায়ী ক্রয় সংক্রান্ত সব নথি চুক্তির নথিতে সংরক্ষণ না করায় তথ্যের ঘাটতির কারণে সাংবিধানিক নিরীক্ষা কাজ ব্যাহত হওয়ায় এ খাতের ব্যয়ের সঠিকতা যাচাই করা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় অডিট আপত্তিতে। তবে এ খাতে অংশিক ক্ষতি দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া উন্মুক্ত দরপত্রের বিপরীতে সীমিত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগে অর্থিক ক্ষতি তিন কোটি ২৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে অনিয়মিতভাবে আরএফকিউ পদ্ধতিতে বার্ষিক সিলিং অপেক্ষা অতিরিক্ত ব্যয় ৯০ লাখ ১৩ হাজার ৯২১ টাকা। মেরামত ও বিল ভাউচারের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি এক কোটি ৭৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বার্ষিক হিসাবে রেকারিং ফান্ডের স্থিতি ব্যাংক স্থিতির চেয়ে কম প্রদর্শন করায় আর্থিক ক্ষতি ৩৩ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০২ টাকা। এছাড়া একই অডিট মেমোতে উল্লেখ করা হয়-জাবিতে চলমান সান্ধ্যকালীন কোর্সের কোনো হিসাব বার্ষিক বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং অডিট কমিটির সামনেও উপস্থাপন করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে অডিট কমিটির প্রধান বাবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, অডিট অধিদপ্তর থেকে চিঠির মাধ্যমে যেসব তথ্য উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে আমি সেসব বা সংশ্লিষ্ট অফিসকে যথাযথ তথ্য উপস্থাপনের জন্য বলেছি। অডিট আপত্তি এসেছে আমি সেটি শুনেছি। নিয়ম অনুযায়ী আমরা এর বিপরীতে তথ্য উপস্থাপন করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত চার বছরে যে অফিসের অডিট আপত্তি এসেছে আমি সে অফিসের সংশ্লিষ্টদের বলেছি বিষয়গুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে।