আজকের পত্রিকা

জাফর

জাফরুল্লাহর রূপরেখায় সাত দলে অসন্তোষ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছে জেএসডিসহ ৭ দল। ইতোমধ্যে কর্মকৌশল নির্ধারণে দুদফা বৈঠক করেছে দলগুলো। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে নতুন এ জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ‘জাতীয় সরকার’র একটি রূপরেখা নিয়ে ৭ দলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তার ফর্মুলা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে এসব দলের একাধিক শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন।

হঠাৎ করে তার জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দেওয়ার কারণ খুঁজছেন তারা। সোমবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের উত্তরার বাসায় ৭ দলের বৈঠক রয়েছে। সেখানে নেতারা বিষয়টির সুরাহা করতে চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সাত দলের একাধিক শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে জানান, তারা সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ আরও কিছু দফা নিয়ে আলোচনা করছেন। ঠিক সে মুহূর্তে ডা. জাফরুল্লাহর জাতীয় সরকার ও কেবিনেটের রূপরেখা ঘোষণা তাদের বিব্রত করেছে।

এর পেছনে কি কারণ হতে পারে তা জানার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন কেবিনেটে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে আগেভাগেই তাকে দিয়ে এ রূপরেখা দেওয়া হতে পারে।

আবার সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ সরকার’ বা ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’র দাবিকে আড়াল করার প্রক্রিয়াও হতে পারে। তবে সাত দলের কয়েকজন নেতা আবার এ নিয়ে ভিন্নমতও দিয়েছেন।

তাদের মতে, এ রূপরেখা ডা. জাফরুল্লাহ ভাসানী পরিষদের পক্ষে দেননি, এটি তার ব্যক্তিগত মত। একজন সিনিয়র নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার মতপ্রকাশ করার অধিকার আছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়। দেশের জন্য তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই হয়তো বলেছেন। 

সূত্র জানায়, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেওয়ার পর সাত দলের একজন শীর্ষ নেতা অন্যান্য দলের নেতাদের একটি জরুরি নোটিশ দেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা একটি রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করেছেন, তাতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করছেন যথাক্রমে সংগঠনটির মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য নঈম জাহাঙ্গীর। ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করতে আগ্রহী নন বলেই এ প্রক্রিয়ায় একজন সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ী হিসাবে থাকতে চান, সাংগঠনিক সদস্য হিসাবে থাকতে আগ্রহী নন। ফলে এ ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার তিনি কোনো মুখপাত্র নন। শুধু তাই নয়, রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্য একান্তই তার নিজস্ব। তার সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষেই এ বক্তব্য তৈরি করা হলো।’

জানতে চাইলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু যুগান্তরকে বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার ব্যক্তিগত মতামত দিতেই পারেন। এর সঙ্গে ভাসানী অনুসারী পরিষদকে না জড়ানোই ভালো হবে। আমাদের দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। 

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রূপরেখা নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও। তিনি বলেন, উনার কথা আমাদের কথা নয়। তারপরও মানুষ তো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমাদের লোক হিসাবে চেনেন। 

বাংলাদেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, উনার (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) ফর্মুলা ব্যক্তিগত। তার মতপ্রকাশ করার তো অধিকার আছে। এ বাপারে সাত দলে কোনো আলোচনা নেই।

আমরা এর দ্বিমত পোষণ করি। কারণ মজলুম ও জালিম তো একসঙ্গে টেবিলে বসা যায় না। উনি যে কেবিনেট দিয়েছেন এটা যারা অত্যাচারী ও দেশকে লুট করেছে তাদের সঙ্গে যারা দেশের পরিবর্তন চায় তাদের বসানোর কোনো মানে হয় না।

এটা নিয়ে আর কোনো বক্তব্য দিতে চাই না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এটা আমার ব্যক্তি প্রস্তাব।

আমি চাই, রাজনৈতিক দলগুলো বিকল্প কিছু বলুক। আমি করব না, হবে না-এসব বলে তো লাভ নেই। নির্বাচনকালীন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের কথা বিএনপি বলছে, তার তো একটা রূপরেখা তাদের দিতে হবে।

সে সরকারের প্রধান কে হবেন এবং সে সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে-তা তো বিএনপিকে রূপরেখা দিয়ে জানাতে হবে। 

এক প্রশ্নর উত্তরে তিনি বলেন, কোনো গুণী ব্যক্তির নাম বলা বিতর্ক করা নয়। ড. কামাল হোসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরা গুণী ব্যক্তি। তাদের গুণাবলী অস্বীকার করব কিভাবে। আমি যাদের নাম বলেছি কারও সঙ্গে পরামর্শ করে বা কাউকে জিজ্ঞাসা করে করিনি।

আমি চিন্তা করে দেখেছি দেশকে শান্তির দিকে নিয়ে যেতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। তা করতে হলে তাদের দরকার। এর বাইরে আরও দু-চারজন থাকতে পারেন। 

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, জাতীয় সরকার বা সর্বদলীয় সরকার করতে হলে সবাইকে নিয়েই তো করতে হয়। আওয়ামী লীগের অন্তত ৩০ শতাংশ ভোট আছে। আমার প্রস্তাবে তাদের (আওয়ামী লীগ) নেওয়া হয়েছে যাতে অংশগ্রহণমূলক হয়।

১৬ মে ‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার’ শিরোনামে একটি লিখিত প্রস্তাব বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার প্রস্তাবে ৯ মাসের মধ্যে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন এবং এর পরের ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা বলা হয়।

ওই প্রস্তাবে সর্বদলীয় ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিকের নামও নিজের প্রস্তাবে তুলে ধরেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।