অনেকেই প্রায়ই কানে অসহ্য চুলকানি এবং কান বন্ধ হয়ে থাকে। পানির মতো কালো ময়লা কানের ভেতর থেকে বের হতে পারে। কানের এ ধরনের চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, যেখানে কালো ময়লার মতো ফাঙ্গাসের দলা কানে জমা হয় এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে, যেখানে ভেজা পত্রিকার পাতার মতো সাদা দলা কানের ভিতরে দেখা যায়।
কানের ছত্রাক রোগ অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে কী কী সমস্যা হয়-
* অতিরিক্ত চুলকানির সঙ্গে কানে অস্বস্তি।
* কানে অসহ্য ব্যথা (যদি এর সঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ যুক্ত হয়)।
* কানের ভিতর কিছু জমা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি। কান ভারী ভারী লাগতে পারে।
* কান থেকে ধূসর, হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
* কানে শুনতে সমস্যা হওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয়
* রোগটা তাদেরই বেশি হয়, যারা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথবা কান পাকা রোগের কারণে অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড সম্বলিত কানের জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন।
* ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
* রোগটি আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়; কারণ এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এ ধরনের পরিবেশ ছত্রাকের জন্য অনুকূল।
* কান পরিষ্কারের নামে যারা ঘনঘন পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
* রাস্তায় ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করেন তারাও অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
চিকিৎসা : কানের রোগ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। অটোমাইকোসিস হলে চিকিৎসকরা চেম্বারে মাইক্রোইয়ার সাকার মেশিনের সাহায্যে অথবা ড্রাই মপিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে কানের ভিতর থেকে ছত্রাকের দলা বের করে এনে কান শুকনো করেন। তারপর বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ পাওয়া যায়; সেগুলো রোগের ধরন দেখে দিয়ে থাকেন। পুরোমাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
* কানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
* এ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা করণীয় হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সঙ্গে প্রয়োজনবোধে ব্যথানাশক দেওয়া হয়ে থাকে।
* এর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* ওষুধ ব্যবহার শেষে শিডিউল অনুযায়ী পুনরায় কান পরীক্ষা করাতে হবে।
জটিলতা প্রতিরোধে চাই সতর্কতা
কান চুলকানির এ সমস্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি যদিও বহিঃকর্ণের, কিন্তু কানপাকা রোগীদের কানেও এই জীবাণু দিয়ে মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে। কানে প্রায়ই কটনবার্ড, দিয়াশলাই-এর কাঠি, মুরগির পালক, চুলের ক্লিপ ঢোকানোর কারণে চুলকানোর সমস্যা হতে পারে, ঘন ঘন এ ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে হিতে বিপরীত হয়ে কানে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাই এসবকিছু ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : নাক-কান-গলা গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট