অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘যৌথ অভিযানে’ নামছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে এ দুই সংস্থা। এদিকে জেলা প্রশাসন তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আতঙ্কে রয়েছে অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক চাল অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। খবর ছড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রামের বৃহৎ চালের আড়ত নগরীর পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জে চালের আড়তে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনকি ডিও ব্যবসায়ীয়দের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী ও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অসাধু চাল ব্যবাসায়ী ও মিলারদের তথ্য সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে কোন ব্যবসায়ীর কাছে কত হাজার টন চাল মজুত রয়েছে তাও জেলা প্রশাসন সংগ্রহ করে ফেলেছে। কারা কারা চাল নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরও তালিকা করা হয়েছে। অভিযান চালানো ছক ইতোমধ্যে শেষ করেছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, পাহাড়তলীর কয়েক বড় অসাধু চাল ব্যবসায়ীকে তাদের নজরদারিতে রেখেছে। এমনকি তাদের চালের গুদামে কারা কারা যাতায়াত করছে এসব তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কোন কোন ট্রাক চাল নিয়ে গুদামে প্রবেশ করছে ওইসব ট্রাকের নম্বরও সংগ্রহ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও খাতুনগঞ্জের একাধিক গোডাইনে হাজার হাজার টন চাল মজুত করে রাখা হয়েছে। এসব চাল মজুতের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা মানা হয়নি। এসব চাল মজুত করে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল মজুত করার পর থেকে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিকেজি চালে ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতিবস্তা চালে (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত চাল রপ্তানি সীমিত করবে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চট্টগ্রামে পাইকাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার কতিপয় অসাধু ও বড় ব্যবসায়ী দাম বাড়ার আশায় টনে টনে চাল মজুত করেছে। ফলে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চালের দাম বাড়ছে। কয়েক মাস ধরে দেশে ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এই চাপে মানুষের জীবনযাত্রায় যেখানে নাভিশ্বাস উঠেছে সেখান নতুন করে চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মোটা চাল ও মোটামুটি ভালো মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এ কারণে নিু ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্ট আরেক দফা বেড়েছে। ক্রেতারা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল প্যাকেটজাত করছে। অথচ তাদের মালিকানায় কোনো মিল নেই। তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে। গোপন তথ্য অনুযায়ী, তাদের কব্জায় বিপুল পরিমাণ চাল রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি আমদানিকারকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার আড়তদাররা আগের দরে চাল বিক্রি করছেন না। এ কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারিতে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিবস্তা ৩৩শ টাকা দরে। ঈদের পরের সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ২৭০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা দরে। একই চাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা বা তারও বেশি দরে। নূরজাহান সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২২৫০ টাকা দরে। ঈদের পরের সপ্তাহে তা তা বিক্রি হয়েছিল ২০০০ থেকে ২০৫০ টাকা দরে। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, জেলা প্রশাসন ও আমরা (চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ) যৌথভাবে অভিযান চালাব। তিনি বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ ‘বড় ধরনের অভিযান’ চালানো হবে।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্যও আমাদের হাতে চলে এসেছে। এখন শুধু অভিযান শুরু পালা। চালের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করলে ছাড় নেই।