আজকের পত্রিকা

চসিক

চার কোটি টাকার স্থাপনা কাজেই আসছে না

কোনো কাজেই আসছে না প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ। গত দুই বছর আগে নগরীর জাকির হোসেন রোডের ‘চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের’ সামনে চালু করা হয় অত্যাধুনিক ব্রিজটি। হাসপাতালে আসা রোগী-স্বজনদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্যই সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি ব্রিজটিতে যুক্ত করা হয়েছিল চলন্ত সিঁড়ি। কিন্তু চালুর দুই মাস পরই বন্ধ হয়ে যায় চলন্ত সিঁড়ির কার্যক্রম। সিঁড়ির ফটকে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ঝুঁকি নিয়ে আগের মতো রাস্তা পার হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে রাস্তা পারাপারে ব্যবহার হচ্ছে না সাধারণ সিঁড়িও। এ কারণে দুই বছর ধরেই ফুটওভার ব্রিজটি পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। অথচ স্থাপিত ব্রিজটির ১০০ গজ দূরেই রয়েছে নগরীর ব্যস্ততম ওয়্যারলেস মোড়। স্কুল-কলেজসহ নানা কারণে ওই মোড় দিয়ে প্রতিদিন রাস্তা পার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এ কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত স্থানে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিণত হয়েছে অপরাধীদের আখড়া হিসেবে।

চসিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে নগরীতে এস্কেলেটর যুক্ত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এটিই নগরীর প্রথম ও একমাত্র চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয় ব্রিজটি। এর দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, প্রস্থ ৯ ফুট। অত্যাধুনিক এই ব্রিজটিতে ওঠার জন্য লাগানো হয়েছে দুটি এস্কেলেটর। তবে নামার জন্য রাখা হয়েছে সাধারণ সিঁড়ি। এর কারণ হচ্ছে মানুষের ওপরে উঠতে কষ্ট হয়। কিন্তু নামা অনেকটাই সহজ। এই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে চসিকের ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু উদ্বোধনের দুই মাস পরই করোনার অজুহাতে বন্ধ হয়ে যায় এস্কেলেটরের কার্যক্রম। সেই থেকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে সিঁড়ির ফটক। বর্তমানে চসিকের ১৬৮ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে সাতটি। এর মধ্যে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার দুটিসহ তিনটি ফুটওভার ব্রিজই অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততম জাকির হোসেন রোডের ওয়্যারলেস মোড়ে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন মানুষজন। কেউ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে, কেউ বা রাস্তা পার হচ্ছেন স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই সড়কের ১০০ গজ দূরেই রয়েছে চসিকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটওভার ব্রিজ। প্রয়োজনীয় স্থানে না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না সেটি। সড়ক পার হতে কেউই ব্যবহার করছেন না ফুটওভার ব্রিজটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ফুটওভার ব্রিজটি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আখড়া হিসেবে পরিণত হয়েছে। রাতে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কাজের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার হয় ব্রিজটি।

নাঈমা সুলতানা নামে পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাসা জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। কলেজে যেতে ওয়্যারলেস মোড় পার হয়ে যেতে হয়। অথচ রাস্তা পার হতে গিয়ে এখানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এজন্য যেদিন কলেজে আসি রাস্তা পার হওয়ার পর বাসায় ফোন দিয়ে জানাতে হয়। না হলে বাসার মানুষজন চিন্তায় থাকেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটির দিকে কেবল তাকিয়েই থাকি।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এস্কেলেটর চালুর কারণে প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল আসে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এস্কেলেটর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজটির এস্কেলেটর কার্যক্রম খুলে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ সিঁড়ি তৈরি করা হলে ব্রিজটি খুলে দেওয়া হবে।