চাকরি থেকে অবসরে গেলেও গোপনে স্পর্শকাতর কাজ করে যাচ্ছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। চাকরি নেই, তবু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গোপন তথ্য ভান্ডারের ইউজার আইডি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লোকপ্রশাসন কম্পিউটার কেন্দ্রের (পিএসিসি) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা গোপনে সংশোধন এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশ্যে সরবরাহ করছেন। সাবেক কর্মকর্তা হয়েও কেউ ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক), কেউ আবার তার কাছে থাকা পূর্বের অ্যাডমিন আইডি ব্যবহার করে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পিডিএস (পার্সোনাল ডাটা শিট) সংক্রান্ত তথ্য ভান্ডারে প্রবেশ করছেন। সব ধরনের এক্সেস থাকায় যে কোনো তথ্য এন্ট্রি কিংবা সংশোধন করার সুযোগও থাকছে তাদের হাতে। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও ডিজিটাল অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে পদোন্নতির সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে যার পদোন্নতি পাবার সুযোগ নেই, তাকেও ভুল তথ্য দিয়ে পার করে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিষয়টি পিএসিসি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জানলেও রহস্যজনক কারণে তারা বেমালুম চেপে গেছেন। পিএসিসি শাখার সাবেক সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মোসলেম উদ্দিন চাকরি থেকে অবসরে যান ২০১৮ সালের ৩১ মে। কিন্তু এখনো তার অ্যাডমিন আইডি ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান অব্যাহত আছে। মোসলেহ উদ্দিনের ইউজার আইডি ব্যবহার করে গত ২৬ জানুয়ারি শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ যুগান্তরের হাতে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আইডি নম্বর ২০৫৯০। একইভাবে বিভিন্ন তারিখে আরও কয়েকজন কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্ট হালনাগাদ করা হয়। যেমন-গত ৩১ জানুয়ারি ৬০১৯ নং আইডি, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৬৩০৬ নং আইডি, গত ৩০ নভেম্বর ২০৪২৭ নং আইডি, ২৯ নভেম্বর ১৬৪৮৩ নং আইডি এবং গত ৭ সেপ্টেম্বর ১৬৪২১ নং আইডি।
সূত্র জানায়, চাকরি না থাকলেও যারা পিএসিসিতে বসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা ব্যবহার করছেন ইউজার আইডি। আর এ তালিকার যারা বাইরে আছেন তারা ভিপিএন ব্যবহার করে যে কোনো স্থান থেকে পিএসিসির তথ্য ভান্ডারে ঢুকতে পারছেন। কিন্তু নিয়ম হলো যখন কেউ চাকরি থেকে অবসরে যাবেন তখন সুপার অ্যাডমিন থেকে তার ইউজার আইডির এক্সেস বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু কয়েকজনের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি বলে তারা এ ধরনের অবৈধ সুবিধা ভোগ করে আসছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর অপরাধ।
সোববার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোসলেহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমি চাকরি ছেড়ে আসার সময় আমার অ্যাডমিন আইডি সারেন্ডার করে এসেছি। পিএসিসি শাখার প্রধান হিসাবে আমি সুপার অ্যাডমিন ছিলাম। নিয়মানুযায়ী আমার স্থলে যিনি এসেছেন তিনি আমার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে এখনো তথ্য হালনাগাদ করার সুযোগ নেই।’ এরপর তাকে যুগান্তরের পক্ষ থেকে তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করা হলে পরবর্তীতে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে পিএসিসি শাখার প্রোগামার জাকির আহমেদ চাকরি থেকে অবসরে যান গত ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিন তার চেয়ারে বসে কাজ করছেন, যা উপস্থিত সবাইকে হতবার করেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে গত সপ্তাহ থেকে তাকে অফিসে আসতে মানা করা হয়। কিন্তু সূত্রমতে, তার হাতে এখনো ইউজার আইডির এক্সেস রয়েছে।
এ বিষয়ে জাকির আহমেদের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও ফোন ধরেননি।
সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বর্তমানে কর্মরত সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘কেউ চাকরি থেকে অবসরে গেলে তার সব ধরনের ইউজার আইটি এক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এ ধরনের কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়।’ যুগান্তরের হাতে তথ্যপ্রমাণ থাকার কথা বলা হলে তিনি বলেন, জাকির আহমেদকে কিছুদিনের জন্য এক্সেস দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে গত সপ্তাহে মিটিং করে এ ধরনের এক্সেস আর কাউকে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ চার বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মোসলেহ উদ্দিন এখনো কীভাবে পিএসিসি শাখার তথ্য ভান্ডারে ঢুকতে পারছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন তথ্য তার জানা নেই।’
প্রসঙ্গত, ক্যাডার কর্মকর্তাদের পিডিএস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ করে পিএসিসি। কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সময় মোট একশ নম্বরের মধ্যে ২৫ নম্বরের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য পিএসিসি শাখা থেকে সংগ্রহ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইং।