আজকের পত্রিকা

চাঁদা না দেওয়ায় মারধর ভাঙচুর, কাজ বন্ধ

চাঁদা না দেওয়ায় মারধর ভাঙচুর, কাজ বন্ধ

চাঁদা না দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আদর্শগ্রামের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম। গত ৩১ মার্চ নির্মাণকাজ বন্ধ করে ভয়ে পালিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। চাঁদা না দেওয়ায় সম্প্রতি স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতার নেতৃত্বে নির্মাণাধীন সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করা হয়। নিরাপত্তা চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইজিসিবি) পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের সচিব কাজী নজরুল ইসলাম ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের অভিযোগ, অব্যাহত হুমকির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে হামলা হলেও অজানা শঙ্কায় তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গত ২৫ মার্চ রাতে হামলা চালানোর তিন দিন পর ২৮ মার্চ জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর উদ্দিন বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় ডায়েরি করেন। বৃহস্পতিবার রাতে জানাজানি হয়। প্রকল্প কর্মকর্তারা হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া জনপ্রতিনিধির নাম জানলেও প্রকাশ করতে রাজি হননি।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ইজিসিবির মাধ্যমে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী গ্রামে এ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। ৯৯৯.৬৫ একর জমিতে ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রিনা এইচওয়াইডিসি জেবি চায়না প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের অফিস নির্মাণসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে আবাসিক ভবন ও সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকৌশলী একরাম হোসেন ও ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও তার লোকজন দফায় দফায় মুঠোফোনে ও প্রকল্প এলাকায় গিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহের কাজ পেতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া হয়নি। এরপর তাদের সঙ্গে সমঝোতা না করে কাজ করা যাবে না বলে প্রকল্প এলাকায় অবস্থানরত ব্যক্তিদের হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ২৫ মার্চ রাতে প্রকল্প এলাকায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে তারা প্রকল্পের শ্রমিক আতিকুল ইসলাম, একরামুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, একরামুল হোসেন, আলি আজগরকে পিটিয়ে আহত করে এবং নগদ টাকা ও পাঁচটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভোর হওয়ার আগেই শ্রমিকদের চলে যেতে বলে। হত্যার হুমকি পেয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে রাতেই পালিয়ে যান। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০-২২ জনের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায়ও শ্রমিক আলী আজগর থানায় আরেকটি জিডি করেন। কাজ চালু রাখতে গত ৩০ মার্চ ফেনী-৩ আসনের সংসদ-সদস্য, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী স্থানীয়দের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় কড়া ভাষায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তব্য দেন। কিন্তু এর পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ বন্ধ রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নিজেকে আওয়ামী লীগের বড় নেতা পরিচয় দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রকল্পের কাজ করতে বলেন। ফেনীতে যেকোনো কাজ করতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে হবে বলেও হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি। শনিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ও নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি হামলার কথা স্বীকার করলেও ভয়ে হামলাকারীদের নাম জানাতে চাননি। এ ঘটনায় প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হামলার সঙ্গে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জড়িত বলে শুনেছি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’ সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ খালেদ দাইয়্যান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ২০-২২ জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সকাল সন্ধ্যা পালা করে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।