বাংলাদেশ

গুগলের কাছে ‘সমালোচনা-মানহানির’ কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ বেশি করছে সরকার

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকার রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় না। বর্তমানে মানুষের মতপ্রকাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাহন ডিজিটাল মাধ্যম। কিন্তু ডিজিটাল মাধ্যমের গণতান্ত্রিক ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ এখনো দূরে। বাংলাদেশের বাজার বড় হওয়ায় সরকারের এ ধরনের অনুরোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর আপসের আশঙ্কা থেকে যায়।

নাগরিক, প্রশাসনিক, অপরাধ ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য চাওয়ার বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ইউটিউব থেকে সমালোচনা-মানহানির কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ

ভিডিও শেয়ারিং ও সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের মালিক প্রতিষ্ঠান গুগল। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সাল থেকে গুগলের কাছে কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ জানিয়ে আসছে।

গুগলের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কনটেন্ট সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০৮টি অনুরোধ পেয়েছে তারা। যেখানে ৩ হাজার ৮৯০ ধরনের ইস্যু ছিল।

ইউটিউব

ইউটিউব
ছবি: রয়টার্স

মানহানি ইস্যুতে তথ্য চাওয়া শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। ২০১৬ সাল থেকে যুক্ত হয় সরকারের সমালোচনা ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে এ সময় ইউটিউবের পাশাপাশি গুগলের মালিকানাধীন জিমেইলও যুক্ত হয়। তবে সে সময় কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ কম ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় তা বাড়তে থাকে।

২০১৮ সালে সরকারের ‘সমালোচনা’-সংক্রান্ত দুটি ইউটিউব কনটেন্ট নামানোর অনুরোধ করা হয়। ২০১৯ সালে একটি। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে একটি, পরের ছয় মাসে ৭৩টি। ২০২১ সালে ১৮০টি ইউটিউব কনটেন্ট নামানোর অনুরোধ জানানো হয়।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের ‘সমালোচনা’-সংক্রান্ত ১৭৪টি ইউটিউব কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করা হয়, যা সর্বোচ্চসংখ্যক। এ ছাড়া একই সময়ে ‘মানহানি’-সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি ৪৪৪টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করা হয়।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের অনুরোধে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ কনটেন্টের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গুগল। এ ছাড়া ৪০ শতাংশের বেশি কনটেন্টের ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট তথ্য পায়নি।

গুগল ছয় মাস অন্তর, অর্থাৎ বছরে দুবার তথ্য চাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪টি জরুরি তথ্য চাওয়া হয়েছিল। আইনি অনুরোধ ছিল ৩টি।

গুগলের কাছে তথ্য চেয়ে সরকারের কাছ থেকে অনুরোধের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরুরি-ভিত্তিতে ১৭টি ও আইনি অনুরোধ ছিল ১০টি। এর মধ্য দিয়ে ৪৭টি অ্যাকাউন্ট ও ২৭ ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানায় সরকার। অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে গুগল ২৬ শতাংশ তথ্য সরকারকে দিয়েছিল। তবে চলতি বছরের প্রতিবেদন এখনো দেয়নি গুগল।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইউটিউব বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩০টি ভিডিও সরিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ভিডিও সরানোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। এর পরে আছে ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া, পাকিস্তান ও জার্মানি। বাংলাদেশের পরে আছে ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউটিউব বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার ৩২৯টি ভিডিও সরিয়েছে।