মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দুর্নীতি বন্ধের উপায় বাতলে সুপারিশও করা হয়। গত সাত বছরে দুদকের করা ৪৫৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নে সুখবর পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুদকের এই সুপারিশগুলো কেউ আমলেই নেয় না। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদনের পাতা উলটেও দেখেন না। আর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুদকের সুপারিশ দায়সারা। সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগ্রহ না দেখালে দুদকের পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ থাকে না। ফলে প্রতিবছর অর্থ খরচ করা সুপারিশগুলো বিফলে যায়। অনেক কর্মকর্তার কর্মঘণ্টা পরিণত হয় পণ্ডশ্রমে। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৈরি করা দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি বড় কাজ হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এই কাজটি কমিশন সঠিকভাবে করলে এ ধরনের সুপারিশের প্রয়োজন পড়ত না। আসলে দুদক দুর্নীতি বন্ধে তাদের কাজটাই সঠিকভাবে করতে পারছে না।’ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ করে থাকি। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা-তা দেখার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দিই। ক্যাবিনেট ডিভিশন যদি চিহ্নিত দুর্নীতির উৎস বন্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ১৭(ঙ) ধারা অনুসরণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর-অধিদপ্তরসমূহ কর্তৃক দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে থাকে সংস্থাটি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দেশে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে-এমন মন্তব্য করা হয় বিভিন্ন সময়ে দেওয়া দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে। দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের সুপারিশ করা দুদকের অর্থ ও সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। তাদের সুপারিশ মানতে মন্ত্রণালয় বাধ্য নয়। মন্ত্রণালয়ের ওপরে ক্ষমতা আছে সংসদীয় কমিটির। তারা চাইলে মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। সেটাও দেখা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দুদক সুপারিশ দেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। তাদের কাজ দুর্নীতিবাজদের ধরে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা। সেটা করতে যতসংখ্যক আইন জানা জনবল দরকার, দুদকে তা নেই।’
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সাত বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য খাতে। এ খাতের দুর্নীতি বন্ধে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭৮টি সুপারিশ পাঠায় সংস্থাটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬টি সুপারিশ পাঠানো হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৫টি, গণপূর্তে ১৫টি এবং ব্যাংক খাতে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যান্য খাতের মধ্যে সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান ওয়াসা, বাংলাদেশ রেলওয়ে, আয়কর বিভাগ, সড়ক ও জনপথ, ওষুধ শিল্প, পাসপোর্ট অফিস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ পাঠিয়েছে দুদক।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক যুগান্তরকে বলেন, ‘দুদকের এ ধরনের কোনো সুপারিশ আমার নজরে আসেনি। বিষয়টি যেহেতু জানতে পারলাম, সেহেতু খোঁজ নিয়ে দেখব এবং সুপারিশের আলোকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সাতটি খাতের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে মোট ৩৬টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে সরকারি নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা অনুসরণ করা হয় না। এছাড়া মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর বরাদ্দের কারণে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়। ফলে যোগ্যতম প্রার্থী নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে উপযুক্ত এবং মেধাবী কর্মকর্তার সংকট হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১০ নম্বর বরাদ্দের বিধি চালু করা ও সরকারি পদে নিয়োগের জন্য চার ধরনের পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়। সাত বছরেও এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। একই প্রতিবেদনে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়, অপেশাদার ও অনভিজ্ঞ লোকজন বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদে অন্তর্ভুক্ত থাকেন। তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দূরদর্শিতার অভাবে ব্যাংকিং খাতে প্রায়ই বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও অপরাধ সংঘটিত হয়। এছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে উপযুক্ত নজরদারি ও জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎসহ অন্যান্য অপরাধ ঘটে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানে দুদকের তিন সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দুর্নীতির উৎসের এক নম্বরে শিক্ষা, দুই নম্বরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও তিন নম্বরে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা খাতের বিষয়গুলো স্থান পায়। মোট ১০টি খাতের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে ৬৬টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা ও সনদ সংক্রান্ত নিয়মতান্ত্রিক অভিযোগ নিষ্পত্তির কোনো পদ্ধতি নেই। কমিশন মনে করে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ বিষয়ে সরকার সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে, এক্ষেত্রে দুর্নীতি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। মানহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে। তাই বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এসব সমস্যা সমাধানে দুদকের সুপারিশের এক নম্বরে ছিল, মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ তা কার্যকর করেনি।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খাতে দুর্নীতির উৎস সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে কোনো কোনো চিকিৎসকের সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়া, পূর্ণ সময় হাসপাতালে উপস্থিত না থাকা, স্বাস্থ্যবিমা না থাকা, ডাক্তার-নার্সদের নিজস্ব হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব বন্ধে দুদকের সুপারিশমালার এক নম্বরে ছিল প্রাইভেট প্রাকটিস ও ডাক্তারের ফি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। দুদকের এই সুপারিশ কার্যকর হয়নি।
২০১৭ সালে শিক্ষা খাতে প্রশ্নফাঁস, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের টেন্ডার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন খাতের বহুমাত্রিক দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে ১০৩টি সুপারিশ করা হয়।
গণপূর্তের দুর্নীতির উৎস সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প নির্মাণকাজের ব্যয় অতিরিক্ত প্রাক্কলন, অহেতুক প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে প্রাক্কলনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, দরপত্র আহ্বানে অনিয়ম, টেন্ডারের তথ্য ফাঁসসহ নানা দুর্নীতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। এসব সমস্যা সমাধানে ৯টি সুপারিশ করা হয়। সংস্থাটি একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি।
২০১৮ সালের প্রতিবেদনে বিবিধসহ ৯টি খাতের দুর্নীতি বন্ধে ১১৮টি সুপারিশ করেছে দুদক। এর মধ্যে শুধু ভূমি ব্যবস্থাপনা খাতে দুর্নীতি বন্ধে সুপারিশ রয়েছে ১০টি। সুপারিশমালার ১ নম্বরে রয়েছে আয়কর মেলার আদলে প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রেশন অফিস এবং ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ‘ভূমি সেবা মেলা’ আয়োজন করা। এসব মেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও ভূমিকর গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। মাসব্যাপী মেলার মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রম চালালে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি ভূমি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ার কথা বলা হয়। কিন্তু দুদকের এই সুপারিশ আমলে নেয়নি ভূমি মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএ যুগান্তরকে বলেন, ভূমিসংক্রান্ত দুর্নীতি বন্ধে এরই মধ্যে কার্যকর সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ভূমি সেবা নেওয়ার জন্য মানুষের হয়রানি বন্ধে পুরো ভূমি সেবাটাকেই ডিজিটাল করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই যে কেউ ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করে নামজারিসহ বহুবিধ কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে। ভূমিসংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির সব পথ বন্ধ করতে কাজ চলছে।
২০১৯ সালে স্বাস্থ্য, ওষুধ শিল্প, সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনা, নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ পণ্য সরবরাহ, নিষিদ্ধ পলিথিনের আগ্রাসন, নদী দখল, ওয়াসাসহ ১৬টি খাতের দুর্নীতি বন্ধে মোট ৮৮টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে বহুল আলোচিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পসহ ১১টি খাতের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে ১২টি সুপারিশ প্রণয়ন করে দুদক। কিন্তু ওয়াসার কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রতিষ্ঠানটি চলছে আগের মতোই।
কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একসঙ্গে তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বিভিন্ন সংস্থার স্তরে স্তরে দুর্নীতির উৎস উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দুর্নীতি বন্ধে প্রতিবেদনে সুপারিশ রয়েছে ৪৫টি। এছাড়া ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা বন্ধে আরও ৫ শতাধিক সুপারিশ করে দুদক। সেগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘দুদকের যে ম্যানডেট সে অনুযায়ী তারা সুপারিশ করতেই পারে। এটা ইতিবাচক। তবে দুদকের সুপারিশগুলো দায়সারা। শুধু সুপারিশ করাই যথেষ্ট নয়। দুদকের উচিত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সুপারিশ বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টি করা। দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলো পর্যবেক্ষণে রেখে যারা সুপারিশ বাস্তবায়ন করছে না তাদের ভর্ৎসনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা। তাহলে সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে দুদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর গাফিলতি রয়েছে।’