দেশে ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৩৪ লাখ মানুষ শিশুশ্রমে নিযুক্ত। এসব শিশুদের ৪ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসডিজি অর্জন ও দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শিশুশ্রম বড় বাধা। এসডিজি অর্জনে ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে মুক্ত করে পুনর্বাসন করার কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত ১২ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে মুক্ত করে পুনর্বাসন করা হবে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শিশুশ্রম নিরসনে ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসনে ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা কী হওয়ার দরকার এই বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন- বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইটিইউসি- বিসি) এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
আইটিইউসি-বিসির সভাপতি সাবেক এমপি শাহ মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শ্রমিক নেতা সাকিল আখতার চৌধুরী। আলোচক ছিলেন শ্রমিক নেতা মুজিবুর রহমান ভুঁইয়া, শহীদুল্লাহ বাদল ও জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ লেবার রাইট্স সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, ওশি ফাউন্ডেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা আলম হোসেইন ও নাসরিন আকতার দীনা।
শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক আবু আশরাফী মাহমুদ বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে সরকার কাজ করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে মুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অন্যান্য স্টেক হোল্ডাররাও এই ব্যাপারে কাজ করছে। ২০১৫ সালে যখন একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করার জন্য এসডিজি স্বাক্ষরিত হয় তখন ১৭টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তার মধ্যে একটি লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ফোকাস পয়েন্ট। দেশ থেকে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসন করার চেষ্টা চলছে।
শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, শিশুশ্রমের একটি অন্যতম কারণ দারিদ্রতা। পরিবারে দুটি ছেলে হলে মনে করা হয় তার ৪টি হাত রয়েছে। তারা কাজ করবে। আমরা সবাই এক হয়েছি। সরকার শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি কাজ করেছে। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে মুক্ত করেছিল। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে মুক্ত করার জন্য ৩৮টি সেক্টরকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ৩৮টি সেক্টরের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬টি সেক্টর সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ট্যানারি শিল্প, জাহাজ শিল্প, চামড়া শিল্প ইত্যাদি। বর্তমানে সরকারের প্রথম যে প্রকল্পটি ছিল সেখান থেকে আমরা ১০ হাজার শিশুকে মুক্ত করেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা ৩০ হাজার এবং তৃতীয় পর্যায়ে আমরা ৫০ হাজার শিশুকে শ্রমমুক্ত করতে পেরেছি। এখন চলছে ওই প্রজেক্টের চতুর্থ পর্যায়। এই চতুর্থ পর্যায়ে আমাদের কাজ হচ্ছে ১ লাখ শিশুকে আমরা ঝুঁকিমুক্ত করবো। যে শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তাকে আমরা খুঁজে বের করে শিক্ষা দিচ্ছি। এবং ৪ মাস দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধে সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ এর পরিণতিতে শিশুশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন-১৩৮ এখনো অনুসমর্থন করেনি। এর আলোকে আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ২০১২ সালে সরকার শিশুশ্রম নিরসনে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করলেও নির্ধারিত ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি খুবই সামান্য। কর্মক্ষেত্রকে শিশুশ্রম মুক্ত রাখতে মালিক পক্ষের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারেন না। প্রকৃতপক্ষে সরকার, মালিক, শ্রমিক সবাইকে শিশুশ্রম নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে। চতুর্থ পর্যায়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে আনা হবে। এক বছর মেয়াদী প্রকল্পে শিশুশ্রমে নিয়োজিত ১ লাখ শিশুকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া হবে। বর্তমানে দেশে ১২ লাখ শিশু ৩৮ টি বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাছে নিয়োজিত আছে।