ঈদে শপিং মলগুলোতে যেমন উপচেপড়া ভিড় তেমনি বিউটি পার্লারগুলোতে যেতেও পূর্ব নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগে। এখন মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও পার্লারে যায় নিজেকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে। কারণ প্রতিযোগিতার এ সময়ে কর্মক্ষেত্রে, ইন্টারভিউয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজেকে যোগ্য ও ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা। কিন্তু আমরা কি জানি আমাদের সৌন্দর্য প্রকাশের প্রধান বিষয়টি কি?
আমেরিকার এক জরিপে বলা হয়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক যখন অন্য কাউকে প্রথম দেখে তখন প্রথমে নজর যায় তার হাসির দিকে। শতাংশের দিক দিয়ে এর অবস্থান ৪৭, এর পর যথাক্রমে চোখ ৩১ , সুগন্ধি ১১ , পোশাক ৭ আর চুল ৪ শতাংশ। হ্যারিস ইন্টারেক্টিভ, ইউএসএ ২০১৩-এর সূত্রমতে হাসির অবস্থান ৮২ শতাংশ। এমন অনেক গবেষণা স্পস্ট বলে সৌন্দর্য প্রকাশে সুন্দর হাসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি প্রচার হওয়ায় মানুষের মধ্যে কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বিবর্ণ দাঁত, আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু দাঁত, ফাঁকা দাঁত, ভাঙা দাঁত, মাড়িতে ফোলা নিয়ে মনোকষ্টে থাকেন, মহামূল্যবান হাসি হাসতে সংকোচ বোধ করেন।
উন্নত বিশ্ব সমমানের নিরাপদ ও বিজ্ঞানভিত্তিক কসমেটিক ডেন্টাল চিকিৎসা এখন সফলভাবে আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। আঁকাবাঁকা বা উঁচুনিচু দাঁতের চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ হলেও বিবর্ণ দাঁত, ভাঙা দাঁত, ফাঁকা দাঁত বা কৃত্রিম দাঁত সংযোজন কিন্তু খুব অল্প সময়েই সম্ভব।
ক’দিন পরই ঈদ। এ সময় নতুন পোশাক বা আনুসঙ্গিক সাজসজ্জার পাশাপাশি নিজের অমলিন হাসিকেও সুন্দর করা চাই, আর সেটি যে কোনো বয়সে। অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত দাঁত কখনই করো কাম্য নয়, সামাজিক ভাবেও নিজেকে ছোট করে। বিবর্ণ দাঁত যেমন- পানের দাগ, ধূমপানের দাগ, কফি বা চা-এর দাগ, পাথর, আয়রনের দাগ বা মাড়ি ফুলে যাওয়া, দুর্গন্ধকে এক অ্যাপোয়েন্টমেন্টেই স্কেলিং ও পলিশিং করিয়ে সুন্দর ও ঝকঝকে করা যায়। দাঁতের নিজস্ব রং পরিবর্তন হলে হোয়াইটেনিং-এর প্রয়োজন পড়ে। এক দিনেই দাঁতের ফাঁকা বন্ধে বা ভাঙা দাঁতকে অত্যাধুনিক বন্ডিং কম্পোজিট ফিলিং করানো যায়। মনে রাখতে হবে সুন্দর ও সুসজ্জিত দাঁত শুধু হাসিকেই সুন্দর করে না, ব্যক্তিত্বকে সুদৃঢ় করে, মুখের আকৃতিকে সুন্দর রাখে, প্রাণ চঞ্চল রাখে, কাজে উৎসাহ জোগায়, স্পষ্ট উচ্চারণে ভূমিকা রাখে, খাবারকে হজমোপযোগী চর্বণ ও স্বাদ গ্রহণে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, স্মৃতিশক্তিকে প্রখর রাখে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এমন অনেক জরুরি বিষয়ের সঙ্গে সুস্থ দাঁত ও সুন্দর হাসির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নিয়ে তথ্য দিচ্ছেন গবেষকরা।
উৎসবে দাঁতের যত্নে যা করণীয়
* যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে : বয়স বাড়ার সঙ্গে দাঁতের মধ্যকার ফাঁকাগুলো বাড়তে পারে। আবার অনেকের মাড়ির শেষ দাঁত বা আক্কেল দাঁতটি বাঁকা হয়ে ওঠে পাশের দাঁতের সঙ্গে লুকায়িত স্থান তৈরি হতে পারে। দুই দাঁতের মধ্যকার পৃষ্ঠে ক্যারিজ বা গর্ত তৈরি হতে পারে। ফিলিং বা ক্যাপের পাশের দাঁতের সঙ্গে সংযুক্ত স্থানটি নষ্ট হওয়া ইত্যাদি নানা কারণে দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে। এখান থেকে ফলে মাড়ি ফুলে গিয়ে ব্যথা বা রক্ত পড়ে, অনেক সময় দাঁতটি নড়েও যেতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে মাংস খাওয়ার আগেই সংগ্রহ করে রাখুন বাজারজাত ডেন্টাল ফ্লস নামক বিশেষ সুতা। প্রয়োজনে ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ সংগ্রহে রাখতে পারেন, তবে অবশ্যই এগুলোর সঠিক ব্যবহার জেনে নিতে হবে। টুথপিক, কাঠি বা কোনো ধাতব দন্ড ব্যবহারকে শক্তভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। পোভিডন আয়োডিন ১ শতাংশ, মাউথ ওয়াশ হিসাবে অনেক ফার্মাসিউটিক্যালস বাজারজাত করছে, সংগ্রহে রেখে কুলি করলে প্রদাহের মাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
* রুট ক্যানেল চিকিৎসাকৃত দাঁত : দাঁতের সংক্রমণ মজ্জা ছুলে রুট ক্যানেল চিকিৎসার বিকল্প নেই। রুট ক্যানেল চিকিৎসা শেষে দাঁতের কষ্ট আর থাকে না। অনেকেই উদাসীনতা বা খরচের কথা ভেবে মাড়ির দাঁতে আর প্রতিরক্ষা ক্যাপ বা কৃত্রিম মুকুট লাগান না। তাই অবশ্যই ঈদে আয়েশ করে খেতে চাইলে অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শে এমন দাঁতে ক্যাপ লাগিয়ে নিন।
লেখক : ডেন্টাল সার্জন, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা ও সদস্য সচিব, বিএফডিএস।