আজকের পত্রিকা

গ্যাস

আরও সাত দিন থাকবে গ্যাস সংকট

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। মঙ্গলবার টানা তৃতীয় দিনের মতো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঢাকাবাসীকে। বিশেষ করে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে চুলা না জ্বলায় ইফতার ও সেহরির খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন তারা। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই সংকট থাকবে কমপক্ষে আরও সাত দিন। এ অবস্থায় আবাসিক, সিএনজি থেকে শিল্প-সবখানেই গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে। গ্যাসের জন্য সিএনজি স্টেশনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা দিয়েছে।

সিএনজি স্টেশনের মালিকরা বলেছেন, গ্যাসের চাপ কম। এ কারণে আগে একটি গাড়িতে গ্যাস ভরতে যেখানে ৫ মিনিট সময় লাগত, সেখানে এখন লাগছে ১৫ মিনিট।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা হুট করে আংশিক উৎপাদন বন্ধ করায় গত দুদিনের মতো মঙ্গলবারও সংকট ছিল। থাকবে আরও বেশ কয়েক দিন।

জ্বালানি বিভাগ থেকে শুরু করে পেট্রোবাংলা এই সংকট নিরসনে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। বিবিয়ানার ছয় কূপের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যে উৎপাদনে আনা হয়েছে। বাকি তিনটি কূপ উৎপাদন শুরু করতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিবিয়ানাতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এলএনজি দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু পেট্রোবাংলার হাতে সেই পরিমাণ সরবরাহ বৃদ্ধির জোগাড় না থাকায় সংকট সমাধানে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। কেবল ভোগান্তিই বেড়ে চলেছে। 

রাজধানীর আবাসিক গ্রাহকরা পড়েছেন সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে। রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা শায়লা আহমেদ বলেন, রোজার প্রথম দিনের মতো মঙ্গলবারও সকালের দিকে নিভু নিভু আগুন ছিল।

দুপুরের পর শত চেষ্টা করেও চুলা জ্বালানো সম্ভব হয়নি। রমজানের প্রথম দিন থেকেই বাইরে থেকে ইফতার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। কবে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবো কে জানে।

একই অভিযোগ মানিকদি, মিরপুরের কিছু এলাকা, বাড্ডা, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, রামপুরা, বনশ্রীসহ বেশ কিছু এলাকায়। এ ছাড়া ঢাকার অন্য এলাকাগুলোতে গ্যাস থাকলেও সেখানে চাপ এত কম যে রান্না করা দায়।

শেখেরটেক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রোজার প্রথম দিন থেকে ওই এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। ভোররাতে উঠে পরের দিনের ইফতারের রান্না শেষ করে ফেলতে হচ্ছে। 

কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখা যায় চুলা জ্বলে না। দিনভর একই অবস্থা থাকে। রাত ১২টার পর নিভু নিভু করে চুলা জ্বলা শুরু হয়। ভোররাত পর্যন্ত অর্থাৎ সেহরির আগ পর্যন্ত কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে লম্বা লাইন। স্টেশন মালিকরা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন গ্যাস নেই।

মহি উদ্দিন নামে একজন উবার চালক জানান, সকাল থেকে গ্যাসের জন্য তিনি ৫টি সিএনজি স্টেশনে গিয়ে গ্যাস পাননি। সব স্টেশনে গিয়ে দেখেছেন সাইনবোর্ড ঝুলানো। গ্যাস নেই।

অথচ তাকে সারা দিন গাড়ি চালাতে হবে। তিনি বলেন, এভাবে কয়েক স্টেশন ঘুরে দুই ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মিরপুর থেকে গ্যাস নিতে পেরেছেন। গাড়ি মালিকরা বলেছেন, বিকালের পর ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকে। এভাবে গ্যাস সংকট থাকলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।

সিএনজি মালিকরা বলছেন, চাপ না থাকায় স্টেশন বন্ধ। আর যেখানে চাপ আছে সেখানে এত ভিড় যে গ্রাহককে দুই-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নুর বলেন, একটা স্টেশন বানাতে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়, ঋণ করতে হয়।

করোনার মহামারিতে এমনিতেই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রমজানের আগেই শুরু হয়েছে গ্যাস রেশনিং। এখন আবার গ্যাসের স্বল্পতায় বিক্রি বন্ধ। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এদিকে গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিবিয়ানার একটি কূপ থেকে গত রোববার রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে বন্ধ করে দিতে হয় ছয়টি কূপের উৎপাদন।

এতে রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। এরপর সোমবার একটি এবং আজ আরও তিনটি কূপ উৎপাদনে এসেছে। সব মিলিয়ে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বিবিয়ানায় মোট কূপের সংখ্যা ২২টি। এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

সকালে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ফেসবুক পেজে জানান, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো।

সমস্যা দেখা দেওয়ায় যা ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছিল। বর্তমানে ১০১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ সন্ধ্যা নাগাদ যা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কবে নাগাদ এই ভোগান্তি কাটবে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, মোট চারটি কূপ উৎপাদনে এসেছে। এর ফলে এখন বিবিয়ানা থেকে এক হাজার ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসছে।

রাতের মধ্যে আরও কিছুটা বেড়ে এক হাজার ১০০ মিলিয়ন হতে পারে। আগামীকালের মধ্যে আরও একটি কূপ উৎপাদনে আসতে পারে। তবে যে কূপ দিয়ে প্রথম বালি উঠছিল সেটি মেরামতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

তিনি বলেন, রোজার বাড়তি চাহিদা মেটাতে এমনিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আমরা গ্যাস দিচ্ছি চাহিদা অনুযায়ী। আবাসিকের সমস্যাও কেটে যাবে ১০ এপ্রিলের মধ্যে। কারণ তখন এলএনজির নতুন কার্গো থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।